News Bangladesh

স্টাফ রিপোর্টার || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ২৭ মে ২০২৫

ব্যবসায়ীদের ১৯৭১-এ বুদ্ধিজীবীদের মতো হত্যা করা হচ্ছে: শওকত আজিজ

ব্যবসায়ীদের ১৯৭১-এ বুদ্ধিজীবীদের মতো হত্যা করা হচ্ছে: শওকত আজিজ

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বিটিএমএ-এর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। ছবি: সংগৃহীত

শিল্পে চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, “যেভাবে ১৯৭১ সালে দেশের জন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল, ঠিক তেমনি ২০২৫ সালে এসে দেশের শিল্পপতিদের এবং শিল্পকে হত্যা করা হচ্ছে।”

বিটিএমএ সভাপতি ও অ্যাম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ বলেন, “আমার যদি আমাদের শিল্পের কথা বলতে হয়, তাহলে আমাকে ১৯৭১-এর উদাহরণ টানতেই হবে। তখন যেমন দেশের জন্য বড় ক্ষতি হয়েছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে, এখন তেমনি শিল্পপতিদের একে একে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।”

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এলএফএমইএবি, বিআইসিআই এবং আইসিসি-বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধিরা। 
শওকত আজিজ রাসেল বলেন, বেশিরভাগ কারখানা এখন বন্ধ অবস্থায়।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা জানি না কোরবানির ঈদের আগে কিভাবে শ্রমিকদের বোনাস বা বেতন দেবো। আমি মনে করি এটি শিল্পখাত ধ্বংসের জন্য একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। অথচ আমরা গ্যাস বিল দিচ্ছি, ব্যাংক ঋণের কিস্তি দিচ্ছি।”

উচ্চ সুদের হার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, “সুদের হার অস্বাভাবিকভাবে বেশি। কেন? কারণ আমরা সেই টাকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি, যা দেশ থেকে লুটপাট করে নিয়ে গেছে কিছু লোক।”

তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “দেশে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
প্রতিদিন শিল্পে ছাঁটাই চলছে। কিছুদিন পর মানুষ রাস্তায় নামবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। শিল্পখাত যদি বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকট থেকে রক্ষা না পায়, তাহলে দুর্ভিক্ষ অনিবার্য হয়ে পড়বে।”

তিনি বলেন, গত আট মাসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) একটিও বিনিয়োগকারী আনতে পারেনি। আপনারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, যেটা অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। একটি কারখানা স্থাপন করে উৎপাদনে যেতে পাঁচ বছর সময় লাগে। বিদেশিরা জানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ লাভজনক নয়। তারা জানে, ভিয়েতনাম বাংলাদেশের চেয়ে অনেক লাভজনক।"

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আজিম চৌধুরী পারভেজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এনবিআর এবং কাস্টমস কার্যকরভাবে কাজ করছে না।”

তিনি সরকারের ঈদের দশ দিনের ছুটির সিদ্ধান্ত নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন:
“দশ দিন ছুটি কিভাবে সম্ভব? যখন আমরা এক দিনের ছুটিও বহন করতে পারি না, তখন সরকার কিভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়? সরকার বলে, ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নাও। এটা কেমন সরকার? যদি সরকারই শিল্প না চায়, তাহলে আমাদের জেলে যাওয়ার ভয় দেখাচ্ছে কেন?”

আরও পড়ুন: সরকারি নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে দুর্বল ৬ ব্যাংক

গ্যাস সংকট নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা অনেক আলোচনা করেছি—কীভাবে গ্যাস পাওয়া যাবে তা নিয়ে। সরকার আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি—শুধু প্রতিশ্রুতি।শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর অঞ্চলে অন্তত ১৫০-২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার কয়েক সপ্তাহ আগে বলেছিল এই তিন এলাকায় ১৫০ এমএমসিএফডি গ্যাস দেবে এবং অতিরিক্ত এলএনজি কার্গো থেকে আরও ১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস যোগ হবে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি।”

উৎপাদন ৬০ শতাংশে নেমে গেছে, ব্যাংক সুদের হারও বেড়েছে, এমন পরিস্থিতিতে তিনি বলেন, “সরকার বলছে ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে, না হলে গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে। সরকার আমাদের গ্যাস দেবে না, সুদের হার বাড়াবে, অথচ গ্যাসের চাপ থাকে ১-২ পিএসআই, তবুও বিল দিতে হবে। ব্যাংক ঋণও পরিশোধ করতে হবে, কিন্তু কারখানায় উৎপাদনই বন্ধ।”

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়