ইসির কাজ গেজেট পর্যন্ত, শপথ স্থানীয় সরকারের দায়: ইসি

ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়েই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে শপথ গ্রহণ না হওয়ায় সিটি করপোরেশন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে, আর ইসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বোচ্চ আদালতেও।
বুধবার (৪ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কমিশন সভা শেষে কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ইশরাক ইস্যুতে আমাদের কাজ ছিল শুধু গেজেট প্রকাশ করা। সেটা আমরা করেছি। এখন শপথের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার।
তিনি জানান, ২৭ এপ্রিল ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে কমিশন এবং ওই গেজেট এখনও বহাল রয়েছে। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চিঠিও দেওয়া হয়।
সানাউল্লাহ বলেন, এখন আর নতুন করে কোনো আইনি পদক্ষেপ কিংবা চিঠির প্রয়োজন নেই বলে মনে করি।
তবে এই অবস্থানের বিপরীতে রয়েছে আদালতের পর্যবেক্ষণ। ২ জুন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যুটি পুরোপুরিভাবে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত।
আদালতের মতে, কমিশন তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
কমিশন সভায় এই রায় বিশদভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র ও পাচার অর্থ ফেরতের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন ড. ইউনূস
সানাউল্লাহ বলেন, আমরা আদালতের দেওয়া পাঁচটি ডিএলআরএ রেফারেন্সসহ আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ খুঁটিয়ে দেখেছি। সেখানে বলা আছে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হলো গেজেট প্রকাশ—আর এ দায়িত্ব কমিশন সফলভাবে পালন করেছে।
ইশরাক হোসেনের শপথ দাবিতে গত ১৪ মে থেকে তার সমর্থকরা নগর ভবনে আন্দোলন করছেন। ফলে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডিএসসিসির দৈনন্দিন কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে আছে। এরমধ্যে শপথ না দেওয়ার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে রিট করা হলেও হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেয় এবং আপিল বিভাগও বিষয়টি নিষ্পত্তি করে।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। শপথ নিয়ে দায়িত্বপালন করছিলেন তাপস। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফলাফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
একদিকে ইসি বলছে তারা গেজেট প্রকাশ করে দায়িত্ব শেষ করেছে, অন্যদিকে আপিল বিভাগ বলছে শপথের বিষয়টিও কমিশনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক জট, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইশরাক হোসেন।
নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর কোনো নতুন চিঠি দেবে না। সিটি করপোরেশন আইনের ধারা ৭ অনুযায়ী, শপথ পরিচালনার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের—এই যুক্তিতে তারা এখন বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের কোর্টে ঠেলে দিয়েছে।
গেজেট প্রকাশিত, আদালতের নির্দেশ স্পষ্ট, আন্দোলন চলছে, কিন্তু মেয়র এখনও শপথ নেননি। এই বাস্তবতায় রাজধানীর দক্ষিণ অংশে নাগরিক সেবা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রশ্নে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তা কেবল প্রক্রিয়া নয়—জনআস্থার দিক থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি