জ্বালানি থেকে প্রযুক্তি: ৬ খাতে সমঝোতায় বাংলাদেশ-জাপান

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কৌশলগত সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
এ সময় ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক ও সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ভবিষ্যৎ উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুক্রবার (৩০ মে) জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেন এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণে একমত হন।
আরও পড়ুন: জাপানের ১.০৬৩ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ
ছয়টি সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত
১. জ্বালানি খাতে কৌশলগত সহযোগিতা
জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন (JBIC) এবং বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি জ্বালানি খাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে করা হয়েছে। এটি বিদ্যুৎ ও গ্যাস অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করবে।
২. বিএসইজেড-এ গ্যাস মিটার প্রকল্প ও শিল্প স্থাপন
জাপানের ওএনওডিএ ইনকর্পোরেটেড এবং বাংলাদেশ এসইজেড লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি অনুসারে, বিএসইজেড (বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন)-এ একটি গ্যাস মিটার ইনস্টলেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। ওএনওডিএ এই উদ্যোগে জাইকার সহায়তায় জড়িত রয়েছে।
৩. গার্মেন্টস সহায়ক শিল্প স্থাপন
বাংলাদেশ ন্যাক্সিস কোং লিমিটেড বিএসইজেড-এ জমি লিজ নিয়ে গার্মেন্টস খাতের সহায়ক সামগ্রী উৎপাদনের উদ্যোগ নিচ্ছে। এতে রপ্তানিমুখী শিল্পখাতের জোগান চেইন আরও শক্তিশালী হবে।
৪. ইলেকট্রিক যানবাহন উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ
জাপানের গ্লাফিট ও মুসাশি সেইমিৎসু ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA)-এর মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে ব্যাটারিচালিত সাইকেল ও বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল উৎপাদন কারখানা স্থাপন করা হবে।
৫. সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ
জাপানের সাইফার কোং লিমিটেড তথ্য নিরাপত্তার জন্য একটি জাতীয় পাইলট প্রকল্পে বাংলাদেশে ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য কোয়ান্টাম-রেজিলিয়েন্ট ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি করা, যেখানে বাংলাদেশি সংস্থাকে প্রযুক্তি ব্যবহারে একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হবে।
৬. ইন্টিগ্রেটেড সিঙ্গেল উইন্ডো প্ল্যাটফর্ম (ISWP) উন্নয়ন
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (JICA) ও BIDA এর মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির মাধ্যমে দেশের বিনিয়োগ-সহায়ক একীভূত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গঠনে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হবে। ISWP-এর মাধ্যমে একাধিক সরকারি সেবা এক প্ল্যাটফর্মে এনে বিনিয়োগকারীদের ঝামেলা কমানো হবে।
আরও দুটি বড় প্রকল্প চুক্তির অন্তর্ভুক্ত
১. উন্নয়ন নীতিগত ঋণ (DPL): অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তার অংশ হিসেবে উন্নয়ন ঋণ প্রদান করবে জাপান।
২. ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী): রেলপথ উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্পে অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা এসেছে।
বৈঠকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আশ্রয় ও মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। অধ্যাপক ইউনূসও জাপানের মানবিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, বিশেষ করে ভাসানচরে অবস্থানরত শরণার্থীদের সহায়তার জন্য।
চুক্তি স্বাক্ষর শেষে অধ্যাপক ইউনূস সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এখন এটি বাস্তবায়ন করা আমাদের কাজ। আমি অনুপ্রাণিত। এই উদ্যোগগুলোর সফল বাস্তবায়নই পারস্পরিক উন্নয়নের পথকে প্রশস্ত করবে।
এই চুক্তিগুলো কেবল অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রসার ঘটাবে না, বরং প্রযুক্তি স্থানান্তর, টেকসই উন্নয়ন এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিক থেকেও বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি