News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ৩০ মে ২০২৫

গভীর নিম্নচাপ এখন স্থলে, সতর্ক আবহাওয়া অফিস

গভীর নিম্নচাপ এখন স্থলে, সতর্ক আবহাওয়া অফিস

ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে এটি সাতক্ষীরা ও আশপাশের অঞ্চলে অবস্থান করছে এবং ধীরে ধীরে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। 

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি এখন স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে গেলেও, এর প্রভাবে শুক্রবার (৩০ মে) দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং আগামীকাল শনিবারও (৩১ মে) পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা নেই।

গত মঙ্গলবার (২৭ মে) বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। পরদিন বুধবার এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে এবং বৃহস্পতিবার ভোরে নিম্নচাপে পরিণত হয়। দিনে গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। বৃহস্পতিবার রাতেই এটি স্থলভাগে উঠে এসে পরিণত হয় স্থল গভীর নিম্নচাপে।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে দুর্বল হলেও এখনো স্থল গভীর নিম্নচাপ হিসেবে সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে আজ সারাদেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বৃষ্টি হবে। আগামীকাল মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার ফলে বৃষ্টির প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, আজ ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার (ভারী বৃষ্টি) এবং কিছু কিছু জায়গায় ৮৮ মিলিমিটারের বেশি (অতি ভারী বৃষ্টি) বৃষ্টিপাত হতে পারে। রাজধানী ঢাকায় সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, যা দিনভর অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস।

গতকাল সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে—১৬৮ মিলিমিটার। রাজধানীতে রেকর্ড করা হয়েছে ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। 

আরও পড়ুন: দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে চালু হলো ডিএনসিসি’র কন্ট্রোল রুম

আগামীকাল শনিবার রংপুর, রাজশাহী এবং ঢাকার কিছু জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একই সঙ্গে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে আরও কয়েক দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বজায় থাকতে পারে।

অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানির ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। রাজধানী ঢাকায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়, যানজট আরও বেড়ে যায়। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনায় অনেক স্থানে বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি ঢুকে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে।

বিশেষ করে ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক উঁচু দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভোলার লালমোহন ও চরফ্যাশনে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়, এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

এদিকে, গতকাল সন্ধ্যা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া, ভোলা-বরিশাল ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি বন্ধ থাকায় যাত্রী ও যানবাহন আটকে পড়ে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, এই গভীর নিম্নচাপটি দুর্বল হলেও এর অবশিষ্ট প্রভাব এবং সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর মিলিত প্রভাবে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলেও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ধারাবাহিক মৌসুমি বৃষ্টিপাত ফসলের জন্য যেমন সহায়ক হতে পারে, তেমনি দুর্বল অবকাঠামোর গ্রামীণ এলাকাগুলোর জন্য হুমকিস্বরূপও হতে পারে। আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকলে সামনের দিনগুলোতে বন্যার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সাগর থেকে শুরু হওয়া একটি লঘুচাপ ধাপে ধাপে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রবেশ করে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ, সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস, এবং জনগণের সতর্কতা জরুরি হয়ে পড়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়