News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ২ জুন ২০২৫

বিভক্তির জন্য নয়, ঐক্যের জন্যই রাজনীতি: প্রধান উপদেষ্টা

বিভক্তির জন্য নয়, ঐক্যের জন্যই রাজনীতি: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে বসেছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ।

সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা।

আলোচনার সূচনা করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা এখানে এসেছি বিভক্তির জন্য নয়, বরং জাতীয় স্বার্থে ঐক্য গঠনের জন্য। আশা করি, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একমত হয়ে একটি চমৎকার জুলাই সনদ তৈরি করতে পারব।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, প্রথম ধাপের সংলাপে প্রাপ্ত সুপারিশগুলোকে ভিত্তি করে দ্বিতীয় ধাপে আরও নতুন প্রস্তাব যুক্ত করার লক্ষ্যেই এ আলোচনা। 

তিনি বলেন, অনেক বিষয়েই আমরা একমত হতে পেরেছি, কয়েকটি বিষয়ে মতানৈক্য রয়েই গেছে। দ্বিতীয় ধাপের উদ্দেশ্য হলো সেই দূরত্ব ঘোচানো।

সন্ধ্যার আগে বৈঠকস্থলে পৌঁছান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস; জামায়াতে ইসলামির নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও হামিদুর রহমান আজাদ; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন; এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।

ড. ইউনূস জানান, আমি আশঙ্কা করেছিলাম রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো এই প্রক্রিয়ায় আগ্রহ দেখাবে না। কিন্তু বাস্তবে তার বিপরীত ঘটেছে— তারা আন্তরিকভাবে যুক্ত হয়েছেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কমিশনের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। এটা আমাদের আশান্বিত করেছে। 

আরও পড়ুন: বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা

উল্লেখ্য, সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, সরকারি প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত পাঁচটি মৌলিক কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে গঠিত হয়েছে এই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম ধাপের আলোচনা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানান, কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত। এর আগেই আমরা জুলাই মাসে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চূড়ান্ত সনদ—‘জুলাই সনদ’—ঘোষণার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রথম ধাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল নিয়ে বেশিরভাগ দল একমত হলেও তার কাঠামো, মেয়াদ ও প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মতানৈক্য রয়ে গেছে। দ্বিতীয় ধাপের মূল উদ্দেশ্য হলো সেই মতানৈক্য নিরসন করে একটি সর্বজনগ্রাহ্য কাঠামো দাঁড় করানো।

সংলাপ শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন সময় বলেছেন— জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ৩০ জুন ২০২৫-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এটি ডিসেম্বরে, জানুয়ারিতে, বা মার্চ-এপ্রিলে হতে পারে, তবে ৩০ জুনের পরে নয়।

তিনি আরও জানান, সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে প্রধান উপদেষ্টা ধন্যবাদ জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থে একসঙ্গে বসা এবং মতপার্থক্য দূর করার চেষ্টা এক বিশাল রাজনৈতিক অর্জন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি নতুন ধারা সূচিত করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইতিহাসে এটাই প্রথমবার যেখানে বিভিন্ন মত ও মতাদর্শের দলগুলো একটি নিরপেক্ষ কমিশনের আওতায় একত্রে বসে একটি জাতীয় সনদ তৈরির প্রচেষ্টায় যুক্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জুলাই সনদের মাধ্যমে যদি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও সংবিধানসম্মত একটি রূপরেখা প্রকাশিত হয়, তাহলে তা আগামী নির্বাচনের ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে উঠতে পারে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়