বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা

ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সোমবার (২ জুন) বিকেল ৫টায় রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এই বৈঠক শুরু হয়।
এতে সভাপতিত্ব করছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নিয়েছেন। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় দফার এ আলোচনা পর্বটি হবে ‘বিষয়ভিত্তিক’। অর্থাৎ যেসব বিষয়ে প্রথম দফার আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, সেসব নিয়ে এবার অধিক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আজকের আলোচনায় আমন্ত্রিত ছিল ৩০টি রাজনৈতিক দল। বিকেল থেকেই বিভিন্ন দলের নেতারা ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রবেশ করতে শুরু করেন। উপস্থিত নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন:
- বিএনপি: স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস কাজল
- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী: ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান
- ১২ দলীয় জোট: মোস্তফা জামাল হায়দার ও শাহাদাত হোসেন সেলিম
- গণসংহতি আন্দোলন: প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী
- জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি): আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার
- জেএসডি: শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন, লেবার পার্টি, এলডিপি, নাগরিক ঐক্য, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ ও আমজনতা পার্টিসহ আরও বহু দলের প্রতিনিধি এই আলোচনায় অংশ নেন।
আরও পড়ুন: ভোটের আস্থা ফেরাতে বাজেট প্রতিশ্রুতি
গত বছরের অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়—সংবিধান, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ বিষয়ক। ফেব্রুয়ারিতে এসব কমিশন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে।
প্রথম দফার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত। এতে ৩৩টি দল ও জোটের সঙ্গে মোট ৪৫টি অধিবেশনে সংলাপ হয়। এই আলোচনায় সাংবিধানিক কাঠামো, ক্ষমতার ভারসাম্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হওয়া যায়নি। তবে অনেক বিষয়ে আংশিক ঐকমত্য বা আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
কমিশন জানিয়েছে, পুলিশ সংস্কার কমিশন ব্যতীত বাকি পাঁচটি কমিশনের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছক আকারে দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাদের মতামতের ভিত্তিতে দ্বিতীয় দফার আলোচনায় বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হচ্ছে।
ঈদুল আজহার আগে ও পরে ধারাবাহিকভাবে দলভিত্তিক আলোচনা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। সব রাজনৈতিক দলকে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে আগামী জুলাই মাসে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে রাষ্ট্র পরিচালনার নতুন রূপরেখা, সাংবিধানিক সংস্কার ও প্রশাসনিক কাঠামোর সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে।
কমিশনের একাধিক সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যদিও এখনো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু প্রস্তাবে মতপার্থক্য রয়েছে, তবুও বেশ কয়েকটি বড় দলের পক্ষ থেকে ইতিবাচক মনোভাব ও নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে, যা এই দফার আলোচনাকে বাস্তবমুখী করে তুলতে পারে।
সংশোধনী ও সংস্কারের এ যাত্রা এখনও অনেক পথ বাকি, তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ ভবিষ্যতের রাষ্ট্র গঠনের পথে আশার আলো দেখাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, রাজনৈতিক দলগুলো কতটা ছাড় দিয়ে একটি সম্মিলিত রূপরেখায় উপনীত হতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি