ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতে প্রতিজ্ঞ অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ—এমন বক্তব্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (২৬ মে) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশনের (ইউএসসিআইআরএফ) সভাপতি স্টিফেন শ্নেক-এর সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার বর্তমান পরিস্থিতি, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম, সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবনা এবং চলমান রোহিঙ্গা সংকট।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, ধর্ম আমাদের সমাজের অন্তর্নিহিত শক্তি। ১৭ কোটি ১০ লাখ মানুষের এই দেশে আমরা ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতি রক্ষায় নীতিগতভাবে অটল।
তিনি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সমঅধিকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আমরা ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সাংবিধানিক ভিত্তি থেকে আরও শক্তিশালী করতে চাই।
সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে প্রশ্ন উঠেছে, সে প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী। যে কোনো আন্তর্জাতিক সাংবাদিক বাংলাদেশে এসে সরেজমিনে তদন্ত করতে পারেন।
তিনি আরও জানান, অভ্যুত্থানের পরপরই অনেক সাংবাদিক ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসেছেন।
আরও পড়ুন: বঞ্চিত ক্যাডারদের জন্য সরকারি সুখবর
এছাড়া, তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, দক্ষিণ এশিয়ার কিছু গণমাধ্যম ও বিদেশি মহল থেকে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানকে ইসলামি চরমপন্থী আন্দোলন হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই প্রচারণা কেবল বিভ্রান্তিকরই নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করছে বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘুদের প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিন সংকটের প্রভাব আমাদের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে চাপে ফেলেছে। আমরা শান্তি ও সহাবস্থানের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছি।
স্টিফেন শ্নেক সংস্কার কমিশনের অগ্রগতি ও প্রস্তাবিত সাংবিধানিক পরিবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে, প্রধান উপদেষ্টা জানান, ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলছে এবং সংশোধনীগুলো দেশের সকল সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিনের নির্যাতন মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এই সংকটের অবসান জরুরি। ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা বিক্ষুব্ধ তরুণরা আজ আমাদের জন্য নিরাপত্তা ও মানবিক চ্যালেঞ্জ—তাদের সামনে ভবিষ্যতের আশার আলো তুলে ধরতে হবে।
তিনি জানান, জাতিসংঘ তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করতে যাচ্ছে। তিনি ইউএসসিআইআরএফের সমর্থন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কামনা করেন এই প্রক্রিয়ায়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি