ট্রাম্পের বিল কংগ্রেসনাল শুয়োরের মাংসে ঠাসা: মাস্ক

ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রস্তাবিত বাজেট ও কর বিল ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক ও ব্যক্তিগত সংঘাত।
সবচেয়ে আলোচিত সমালোচক হলেন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী, যিনি ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং সদ্য বিদায়ী ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই)’ প্রধান ইলন মাস্ক।
এই বিলের বিরুদ্ধে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে মাস্ক বলেন, আমি দুঃখিত, কিন্তু আর সহ্য করতে পারছি না। এটি একটি বিশাল, অপচয়পূর্ণ ও ন্যক্কারজনক বিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভয়াবহ ঋণের মধ্যে ফেলবে।
তিনি আরও বলেন, যারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তারা আমেরিকান জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আগামী নির্বাচনে জনগণ এর জবাব দেবে।
‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত এই প্রস্তাবে রয়েছে—
- ২০১৭ সালের করছাড়ের মেয়াদ বৃদ্ধি
- মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ
- জাতীয় ঋণসীমা ৪ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো
- প্রতিরক্ষা খাতে বড় বরাদ্দ
- বিদেশি সহায়তা, ইউএসএআইডি, এনপিআর ও পিবিএস-এর বাজেট কাটছাঁট
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নতুন সদস্য ৫ দেশ
তবে এই বিপুল ব্যয়ের ভার সামাল দিতে গিয়ে বিলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও বড় ধরনের ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব এসেছে। কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস জানিয়েছে, এতে মেডিকেইডে ৬৯৮ বিলিয়ন ডলার এবং খাদ্য সহায়তা (এসএনএপি)–এ ২৬৭ বিলিয়ন ডলার কমানো হতে পারে।
মাস্ক এই বিলকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দুর্নীতি নয়, বরং রাজনৈতিক ব্যর্থতার প্রতীক হিসেবেও দেখছেন।
তার ভাষায়, “এই বিল কংগ্রেসনাল শুয়োরের মাংসে ঠাসা”— একটি আমেরিকান রাজনৈতিক শব্দবন্ধ, যা নির্বাচনভিত্তিক অপ্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ বোঝায়।
তিনি দাবি করেন, এই বিল বাস্তবায়িত হলে বাজেট ঘাটতি ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের পথে নিয়ে যাবে।
তার এই মন্তব্য রাজনৈতিক সতর্কতার আকারও নিয়েছে—“২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিশ্বাসঘাতকদের বরখাস্ত করুন।”
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট জানেন মাস্ক কী ভাবছেন। কিন্তু এতে তাঁর মতামত পরিবর্তন হয়নি। এই বাজেট একটি বড় এবং সুন্দর অর্জন।
ট্রাম্প নিজেও বলেন, এটা ‘বিগ গ্রোথ বিল’। মাস্কের মতন পাগলামি দিয়ে কিছু হয় না।
তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে মাস্ক একা নন। রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পলও বিলের বিরোধিতা করে বলেন, সরকারের অপচয়ের নির্লজ্জ উদাহরণ এটি।
তিনি ঋণসীমা বাড়ানোর বিরোধিতা করে বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণে ডুবাবে।
গত ২২ মে প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি মাত্র ১ ভোটের ব্যবধানে (২১৫–২১৪) পাস হয়। যদিও রিপাবলিকানদের সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, কিন্তু দুইজন সদস্য—থমাস ম্যাসি ও ওয়ারেন ডেভিডসন—নিজ দলের বিরোধিতা করে ভোট দেন। ডেমোক্রেটরা এককভাবে পুরো বিলের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
সাম্প্রতিক এই মতবিরোধ মাস্ক ও ট্রাম্পের সম্পর্ককে নতুন মোড়ে দাঁড় করিয়েছে। প্রেসিডেন্টের নির্বাচন প্রচারণায় সরাসরি যুক্ত থাকা মাস্ক ডিওজিই’র প্রধান হিসেবে সরকারি খরচ কমানো, অপ্রয়োজনীয় চুক্তি বাতিল ও কাঠামোগত সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক চাপ বাড়তে থাকলে তিনি ৩১ মে পদত্যাগ করেন।
এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, একটা বিল বড় হতে পারে অথবা সুন্দর হতে পারে। কিন্তু দুটো একসাথে হওয়া সম্ভব নয়।
তার মতে, এই বিল ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সরকারি দক্ষতা’ প্রচেষ্টাকে উল্টো পথে ঠেলে দিচ্ছে।
ট্রাম্প-মাস্ক সংঘাত এখন কেবল দুই ব্যক্তির মতপার্থক্য নয়, বরং তা আমেরিকান রাজনীতির গভীর মেরুকরণ ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সামনের নভেম্বর ও ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত এই সংঘাত রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি