মহাকাশে স্টারশিপের নবম বিপর্যয়

ছবি: সংগৃহীত
অভিযানের স্বপ্নপূরণের পথে আবারও বড় ধাক্কা খেল ইলন মাস্কের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষিত মহাকাশযান স্টারশিপের নবম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। উৎক্ষেপণের মাত্র ৩০ মিনিট পর রকেটটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাকাশে ছিটকে পড়ে এবং পরবর্তীতে সেটি বিস্ফোরিত হয়।
মঙ্গলবার (২৭ মে) যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বোকা চিকা লঞ্চ সাইট থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে স্টারশিপের নবম ফ্লাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। প্রায় ১২৩ মিটার দীর্ঘ এই দুই ধাপবিশিষ্ট রকেটটি উৎক্ষেপণের প্রাথমিক ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করলেও, উৎক্ষেপণের প্রায় আধা ঘণ্টা পরেই জ্বালানি লিকের কারণে মহাকাশে রকেটটির ঘূর্ণন শুরু হয় এবং এটি নিয়ন্ত্রণ হারায়।
স্পেসএক্স পরে এক বিবৃতিতে জানায়, স্টারশিপে “র্যাপিড আনস্কেডিউলড ডিসঅ্যাসেম্বলি” ঘটেছে—মানে, এটি পূর্ব পরিকল্পনার বাইরে দ্রুত বিস্ফোরিত হয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এটি তাদের “ফেইল ফাস্ট, লার্ন ফাস্ট” কৌশলের অংশ, যার মাধ্যমে প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে শেখার সুযোগ তৈরি হয়।
বিস্ফোরণের পর রকেটের ধ্বংসাবশেষ দক্ষিণ ফ্লোরিডা ও বাহামাস উপকূলবর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আকাশে আগুনের গোলা ছড়িয়ে পড়ছে এবং পরে ধ্বংসাবশেষ সাগরে পতিত হচ্ছে। যেহেতু ঘটনাটি জনবহুল এলাকাগুলোর কাছাকাছি সংঘটিত হয়েছিল, তাই সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ফ্লোরিডার চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর—মায়ামি, ফোর্ট লোডারডেল, পাম বিচ ও অরল্যান্ডো—এ সাময়িক ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করে।
এই নিয়ে পরপর তিনটি স্টারশিপ পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাকাশে বিস্ফোরিত হলো। এর আগে গত ৬ মার্চ অষ্টম উৎক্ষেপণে একই ধরনের ব্যর্থতা দেখা গিয়েছিল, যেখানে মূল মহাকাশযানটি নিয়ন্ত্রণ হারালেও সুপার হেভি বুস্টার নিরাপদে উৎক্ষেপণ প্যাডে অবতরণ করেছিল। আরও আগে জানুয়ারিতে সপ্তম ফ্লাইটটিও অনুরূপভাবে ব্যর্থ হয়েছিল।
আরও পড়ুন: মজিলার পকেট বুকমার্কিং সার্ভিস বন্ধ হচ্ছে ৮ জুলাই
ইলন মাস্ক এই স্টারশিপ প্রকল্পের পেছনে ইতোমধ্যে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। তার লক্ষ্য একদিকে যেমন মঙ্গল গ্রহে মানুষের উপনিবেশ গড়ে তোলা, অন্যদিকে চাঁদে মানুষ পাঠাতে নাসার সঙ্গে যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়ন। তবে ক্রমাগত ব্যর্থতা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে মহাকাশ প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মধ্যে।
স্পেসএক্স অবশ্য আশাবাদী। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, প্রতিটি ব্যর্থতা তাদের প্রকৌশলগত উন্নতির পথ খুলে দিচ্ছে। স্টারশিপকে আরও নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে প্রতিটি পরীক্ষা থেকে তারা প্রযুক্তিগত শিক্ষা নিচ্ছে।
এক নজরে স্টারশিপ টেস্ট ফ্লাইটগুলোর ফলাফল
- মোট উৎক্ষেপণ: ৯টি
- সম্পূর্ণ সফল: ১টি
- আংশিক সফল: ৪টি
- সম্পূর্ণ ব্যর্থ (বিস্ফোরণ): ৪টি
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পে শুরুতে এমন ব্যর্থতা অস্বাভাবিক নয়। তবে স্পেসএক্সের ক্ষেত্রে এটি এখন জননিরাপত্তা ও প্রকল্পের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্টারশিপ প্রকল্প এখনো গন্তব্যের অনেক দূরে। তবে ব্যর্থতার মাঝেও যে আশার আলো আছে, তা স্পেসএক্সের প্রকৌশলীরা প্রত্যেক পরীক্ষায় প্রমাণ করছেন। আগামী দিনে মানবসভ্যতা আদৌ কি বহুগ্রহে বিস্তৃত হবে, নাকি স্টারশিপ হবে এক উচ্চাভিলাষী স্বপ্নের অতীত? উত্তর সময়ই দেবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি