বাড়ছে করোনা, শনাক্তের হার উদ্বেগজনক

ফাইল ছবি
দীর্ঘ সময় তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকার পর ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় আবারও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। প্রতিবেশী দেশ ভারতে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে এবং বাংলাদেশেও শনাক্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
রবিবার (৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সর্বশেষ করোনা আপডেট অনুযায়ী, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
অর্থাৎ, শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশ, যা সাম্প্রতিক সময়ে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যদিও একই সময়ে দেশে করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি, তবে ৫ জুন একজন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটেছে।
এ সময়ে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৬ জন। সব মিলিয়ে দেশে মোট সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৩ জনে। এখন পর্যন্ত দেশে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪২ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৫০০ জন। মহামারির শুরু থেকে দেশে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ২৩৭টি এবং সামগ্রিক গড় শনাক্তের হার ১৩.০৫ শতাংশ।
ভারতে সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয়ই ঊর্ধ্বমুখী
ভারতে একই সময়ে নতুন করে ৩৭৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ৬ জন। দেশটিতে বর্তমানে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ১৩৩ জনে পৌঁছেছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন ধরনের (variant) ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় সেখানে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাংলাদেশ ও ভারতে কোভিড-১৯ এর এই পুনরুত্থান ঋতু পরিবর্তন বা নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের কারণে হয়ে থাকতে পারে। তবে এখনো পর্যন্ত নতুন ধরনের ব্যাপারে সরকারিভাবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
ঈদযাত্রা ও জনসমাগমে সতর্কতা জারি
আসন্ন ঈদ পরবর্তী ট্রেন যাত্রা এবং অন্যান্য গণপরিবহন ও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ হারের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সবার মাস্ক পরা আবশ্যক। বিশেষত বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকেও একই ধরনের সতর্কতা জারি করে বলা হয়েছে, ঈদের সময় যাত্রী চলাচল বৃদ্ধির কারণে ট্রেন স্টেশন ও ভ্রমণকালে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: নতুন রূপে করোনা, সতর্ক বাংলাদেশ
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: গা-ছাড়া মনোভাব বিপজ্জনক
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। বরং মানুষের মধ্যে গা-ছাড়া মনোভাবের কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয় যে ভাইরাসটি এখনো সক্রিয় এবং আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হলে তা আবারও বিস্তার লাভ করতে পারে।
তারা সবাইকে নিয়মিত হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার, মাস্ক পরা এবং অপ্রয়োজনে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করে বলেছেন, যদিও সাম্প্রতিক সংক্রমণ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু শনাক্তের হার খুবই বেশি। তাই পরিস্থিতি অবহেলা করলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন করে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সরকার আবারও কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক গাইডলাইন পর্যালোচনার চিন্তাভাবনা করছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা বাড়ানো, ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিতে উদ্যোগ নেওয়া এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সক্রিয় নজরদারি অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
অতীত অভিজ্ঞতা স্মরণীয়
২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুই দিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জন করে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে— যা মহামারির ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দেয়।
বর্তমান সংক্রমণের হার ও নতুন করে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা এই বার্তাই দেয় যে করোনাভাইরাস এখনো বিদায় নেয়নি। অতএব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সচেতনতা বজায় রাখা এবং সরকারি নির্দেশনা মানার মাধ্যমেই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ব্যক্তিগত অসতর্কতা যেন আবারও জাতিকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে না দেয়, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি