News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৪৭, ৮ জুন ২০২৫

নতুন রূপে করোনা, সতর্ক বাংলাদেশ

নতুন রূপে করোনা, সতর্ক বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সর্বশেষ জেনেটিক সিকোয়েন্স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নতুন করে ছড়িয়ে পড়া এই সংক্রমণের পেছনে রয়েছে ওমিক্রন ধরনের বেশ কয়েকটি নতুন উপধরন বা সাব ভ্যারিয়েন্ট—LF.7, XFG, JN.1 ও NB.1.8.1। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সংক্রমণ বাংলাদেশের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যেহেতু দেশটি ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং পারস্পরিক যাতায়াত অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ সরকার সব স্থল, নৌ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি কঠোরভাবে মানার নির্দেশনা দিয়েছে। 

২০২৫ সালের ৪ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আদেশে বলা হয়, ভারতসহ বিভিন্ন সংক্রমিত দেশ থেকে আগত যাত্রীদেরকে ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর (International Health Regulations) হেলথ ডেস্কের সহায়তায় নিবিড় স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্য বার্তা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। সন্দেহজনক যাত্রীদের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশনের জন্য পাঠানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (৮ জুন) সকাল থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিকেল ডেস্কে উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তারা ভারত ফেরত যাত্রীদের কাছ থেকে করোনার উপসর্গ আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করছেন।

ভারত থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরা যাত্রী পরিতোষ মণ্ডল বলেন, ১০ দিন আগে ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম। আজ দেশে ফিরলাম। বাংলাদেশে তো করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, কিন্তু ভারতে কোথাও এমন কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা করোনা টেস্ট দেখিনি।

একইভাবে, চিকিৎসা শেষে ফেরা আরেক যাত্রী সীমা রানি জানান, এক মাস চিকিৎসার পর দেশে এলাম। ভারতে কোথাও করোনার নতুন প্রভাব সম্পর্কে কিছু শুনিনি। তবে বাংলাদেশে আসার পর দেখি পরীক্ষা করছে।

এই বিষয়ে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার আব্দুল মজিদ জানান, ভারতে জেনেটিক সিকোয়েন্স পরীক্ষায় দেখা গেছে, কিছু এলাকায় ওমিক্রনের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে যাতে এই সংক্রমণ না ছড়ায়, সে জন্য আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি ভারত ফেরত যাত্রীকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। উপসর্গ থাকলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের নতুন একটি ভয়ংকর রূপ—‘কোভিড-ওমিক্রন XBB’—ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলে এটির উপস্থিতি নিশ্চিত না হলেও, ঢাকা ও রাজশাহীতে এর উপসর্গ বিশিষ্ট কয়েকজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর ফলে বিভাগীয় পর্যায়ে সতর্কতা আরও জোরদার করা হচ্ছে। 

আরও পড়ুন: দীর্ঘ বিরতির পর করোনায় প্রাণহানি ১, শনাক্ত ৩

যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল জানান, চারপাশে কোভিড-ওমিক্রন XBB আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু জেলায় আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। যেহেতু এ ভ্যারিয়েন্ট আগের ডেল্টা বা ওমিক্রনের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক ও মারাত্মক, তাই আমরা আগেভাগেই যশোরবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছি।

কোভিড-ওমিক্রন XBB ভ্যারিয়েন্টের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো—এটি অত্যন্ত ধূর্ত এবং শনাক্ত করা কঠিন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা সহজেই কাহিল হয়ে পড়লেও নাক বা গলার সোয়াব পরীক্ষায় অনেক সময় মিথ্যা নেতিবাচক (false negative) ফলাফল আসছে। এমনকি নাসোফ্যারিঞ্জিয়াল পরীক্ষাও প্রায়ই সঠিক ফলাফল দিচ্ছে না।

এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মাঝে দেখা যেতে পারে—

  • জ্বর
  • কাশি ছাড়াই মাথা, গলা, পিঠ ও জয়েন্টে ব্যথা
  • নিউমোনিয়ার লক্ষণ
  • অকস্মাৎ ক্ষুধামন্দা

চিকিৎসকদের মতে, XBB ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার চেয়ে ৫ গুণ বেশি বিষাক্ত, এবং এতে মৃত্যুহারও বেশি। অনেকে জ্বর ও ব্যথাবিহীন অবস্থায় আক্রান্ত হলেও এক্স-রেতে নিউমোনিয়ার চিহ্ন দেখা গেছে, যা ভাইরাল নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

স্বাস্থ্য বিভাগ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, কেউ যেন উপসর্গকে হালকাভাবে না নেন এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসার উদ্যোগ নেন। বিশেষ করে যারা সম্প্রতি ভারত বা অন্যান্য সংক্রমিত দেশ ভ্রমণ করেছেন, তাদের প্রতি আরও সতর্কতার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, যদি এখনই প্রস্তুতি নেওয়া না হয়, তাহলে এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়