News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ৬ জুন ২০২৫
আপডেট: ০৮:১১, ৬ জুন ২০২৫

কালুরঘাট সেতুতে অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৩

কালুরঘাট সেতুতে অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৩

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেলসেতুর ওপর ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এক শিশু ও নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত পাঁচজন। 

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত ১০টার দিকে সেতুর পূর্ব প্রান্ত, বোয়ালখালী অংশে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন সেতুর ওপর থাকা একাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, সেতুর ওপর একটি অটোরিকশা নষ্ট হয়ে পড়ায় যানজট তৈরি হয়। ওই সময় সেতুর দুই দিক থেকেই ছোট যানবাহন ওঠানামা করছিল। ঠিক তখনই দ্রুতগতিতে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি এসে সেতুতে ওঠে এবং সামনে থাকা যানবাহনগুলোকে চাপা দেয়। ট্রেনের ধাক্কায় চারটি সিএনজি, একটি প্রাইভেটকার, একটি কাভার্ড ভ্যান ও একাধিক মোটরসাইকেল দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একজন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। নিহত শিশুটির নাম আয়েশা (৭), সে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগরের বাসিন্দা।

আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। পরিচয় পাওয়া আহতদের মধ্যে রয়েছেন আসিফ উদ্দিন বাপ্পি, আসমা আহমেদ ও আঞ্জু আরা। আহতদের কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস, রেলওয়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিভাগের (পূর্বাঞ্চল) ব্যবস্থাপক আবদুর রহমান জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং আপাতত ওই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। 

আরও পড়ুন: ঈদের কেনাকাটা শেষে ট্রাকচাপায় ৩ জন নিহত

দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে রেল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্যে উঠে এসেছে ট্রেনচালকের নিয়ম ভঙ্গ এবং যানজট দুটোই। গুমদণ্ডী ও জানালিহাট রেলস্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ট্রেনকে সেতুর পূর্ব প্রান্তে থেমে লাইনম্যানের সংকেত নিয়ে সেতুতে উঠতে হয়। কিন্তু ট্রেনটি ওই নিয়ম না মেনে উচ্চগতিতে সেতুতে উঠে পড়ে। এদিকে যানজটে আটকে থাকা গাড়িগুলোর পক্ষে সেতু ছাড়াও সম্ভব হয়নি।

তবে একইসঙ্গে ট্রেন চলাচলের সংকেত অমান্য করে সেতুর ওপর যানবাহন ওঠার বিষয়টিও অভিযোগ হিসেবে উঠে এসেছে। স্থানীয়দের মতে, সেতুর দুইপাশে কোনো ব্যারিকেড না থাকায় প্রায়ই ছোট যানবাহন নিয়ম না মেনে সেতু দিয়ে চলাচল করে।

রাত ১১টার মধ্যে কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন থেকে অ্যাম্বুলেন্সসহ দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল মান্নান জানান, দুর্ঘটনার পরপরই সেতুর নিচে ও ট্রেনের ইঞ্জিনের নিচে আটকে থাকা যানবাহন উদ্ধারের কাজ শুরু হয়।

বোয়ালখালী থানা, চান্দগাঁও থানা ও রেলওয়ে পুলিশ যৌথভাবে উদ্ধার ও তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

কালুরঘাট সেতুর দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ অবস্থা, অব্যবস্থাপনা ও ট্রেন-যানবাহন সমন্বয়ের অভাব এই দুর্ঘটনার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিয়ম ভঙ্গ করা যেই হোক না কেন, এই ভয়াবহ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে তিনজন, যাদের মধ্যে একজন শিশু—এটি যে কোনো বিবেচনায় মর্মান্তিক ও নিন্দনীয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে এই সেতুর যানবাহন ও ট্রেন চলাচল নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করা এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা, যাতে এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়