News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২২ অক্টোবর ২০২০
আপডেট: ০৭:৫৬, ২৩ অক্টোবর ২০২০

মি. বেকারে ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযান, ব্যাংক হিসাব তলব

মি. বেকারে ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযান, ব্যাংক হিসাব তলব

কেক এন্ড পেস্ট্রি শপের প্রতিষ্ঠান মি. বেকার ভ্যাটের হিসাবপত্র ছাড়াই ৩৪টি বিক্রয় কেন্দ্রে ব্যবসা পরিচালনা করছে এমন অভিযোগে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হিসাব তলব করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। 

একই সঙ্গে মি. বেকারের টঙ্গী ও গাজীপুরের হেড অফিসে (কারখানা) ভ্যাট গোয়েন্দা অভিযান চালিয়েছে।  এতে গোয়েন্দা ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে।  অধিকতর তদন্তের জন্য মি. বেকারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের হিসাব তলব করা হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

মইনুল খান বলেন, মি. বেকার রাজধানীতে পেস্ট্রি শপের ২৯টি ও সুইটমিটের ৫টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।  প্রতিষ্ঠানটির হেড অফিসের ঠিকানায় তাদের কারখানাও অবস্থিত।  বৃহস্পতিবার ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর থেকে এই সংক্রান্ত টঙ্গীর ঢাকা ব্যাংক, কামারপারা শাখা ও সাউথইস্ট ব্যাংকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার দু্টো পৃথক দল ২০ অক্টোবর মি. বেকার কেক এন্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড, ১৬০/৪৮৫, মোকদাম আলী সরকার রোড, ধোউড়, তুরাগ, ঢাকা এবং মি. বেকার সুইটস, ২/১ কুনিয়া পাচর, তারগাস, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর সদর, গাজীপুর-১৭০৪ নামীয় প্রতিষ্ঠান দুটোর হেড অফিস কাম কারখানায় অভিযান চালায়। 

পেস্ট্রি শপের ভ্যাট নিবন্ধন নাম্বার ০০০৯৬৪৬৮২ -০১০২। অন্যটির ভ্যাট নিবন্ধন নাম্বার ০০১১৪৬১৭৭-০১০৩ । প্রতিষ্ঠান দুটো ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত। অভিযান দুটোতে নেতৃত্ব দেন উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার, ফেরদৌসি মাহবুব ও তানভীর আহমেদ। 

এদিক অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান গত ১৮ অক্টোবর তার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ‘মি. বেকার’ এর বিক্রয়কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। তিনি ওই স্ট্যাটাসে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছেনা। ওই কেন্দ্রটিতে ভ্যাট কর্তন করে একটা কাঁচা চালান দিয়ে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

ওই অভিযোগ ও আরো গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআরে চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম অভিযোগটির তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন।  এর পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের আকষ্মিক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠান দুটোতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুসারে ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি।  ভ্যাট আইন অনুযায়ী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওই দুটো হিসাব সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

পরিদর্শনকালে ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিলাদি দেখাতে বলা হলে, উপস্থিত মালিকপক্ষ তা দেখাতে পারেননি এবং ওইগুলো সংরক্ষণ না করার বিষয়ে তারা কোন সদুত্তরও দিতে পারেননি।  ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযানের আশঙ্কায় প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে মালিকপক্ষ নিজস্ব বাণিজ্যিক দলিলাদিও রাখেন না।

এতে ভ্যাট গোয়েন্দার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে নিজস্ব মনগড়া হিসাবের ভিত্তিতে ‘মি. বেকার’ স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে। একইসাথে তারা ভোক্তাদের নিকট থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেননি। অভিযানের এক পর্যায়ে গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে অবস্থিত অন্য একটি ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে অবস্থিত কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাদের পুরোনো কিছু অসংগঠিত তথ্যাদি পাওয়া যায়। গোয়েন্দা সেখান থেকে ওইসব কাগজপত্র জব্দ করে। 

গোয়েন্দার জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এমনকি অভিযানের আগের দিন যেসব পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে বের করেছে তার মূসক-৬ দশমিক ৫ চালান দেখতে চাইলেও তারা দেখাতে পারেননি। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটো কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত হওয়ায় মূসক-৬ দশমিক ৫ এর মাধ্যমে পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে আউটলেটে নেয়ার বিধান থাকলেও তা পরিপালন করা হয় না।  পাশাপাশি, ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের আরেকটি দল উত্তরার ৩ নং সেক্টরের ৪ নং রোডে অবস্থিত মি. বেকার কেক এন্ড পেস্ট্রি শপের ওই বিক্রয়কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে। কর্মকর্তারা প্রথমে পরিচয় গোপন করে পণ্য ক্রয় করে দেখতে পান যে, এই বিক্রয়কেন্দ্রটি মূসক চালান (মূসক-৬ দশমিক ৩) ব্যতীত পণ্য বিক্রি করছে।  এখানে তারা অভিযোগকারী অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবের অভিযোগের সত্যতা পান। 

একইসাথে, গোয়েন্দা ২১ অক্টোবর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘মি. বেকার’ এর দুটো বিক্রয়কেন্দ্র থেকে পণ্য ক্রয় করেও দেখতে পান যে, তারা মূসক চালান ব্যতীত পণ্য সরবরাহ করছে।  এতে প্রমাণিত হয় ভ্যাট আইন অনুসারে রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ না করে এবং ভ্যাট আইন লংঘন করে প্রতিষ্ঠানটি ৩৪টি বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট চালান ব্যতীত পণ্য সরবরাহ ও বিক্রয় করায় ‘মি. বেকার’কে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে আজ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।  একইসাথে, প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে অপরিচালনযোগ্য করা হয়েছে।

অভিযানে জব্দ করা দলিলাদি ও ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত দলিলাদির ভিত্তিতে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ নির্ণয় ও অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।  একইসাথে, ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযুক্ত ‘মি. বেকার’ এর যাবতীয় উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রয় সরাসরি তত্ত্বাবধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর কমিশনারেটের নিকট সুপারিশ করা হয়েছে। 

নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএজেড/ডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়