স্বর্ণের দামে বড় পতনের পূর্বাভাস

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ‘সিটি’ এক চাঞ্চল্যকর পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার প্রবণতা স্পষ্ট হতে পারে এবং ২০২৬ সালের মধ্যেই তা আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। 

তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দুবাইয়ের বাজারে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম আবারও গ্রামপ্রতি ৩০০ দিরহামের নিচে নামতে পারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯,৯৯০ টাকা। এতে এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দাঁড়াবে ৩,৪৯৮ দিরহাম বা ১,১৬,৪৮৪ টাকা।

বুধবার (১৮ জুন) গালফ নিউজের প্রকাশিত প্রতিবেদনে সিটির এই পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রথমবারের মতো দুবাইয়ে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম গ্রামপ্রতি ৩০০ দিরহাম অতিক্রম করে। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৩৮৩ দিরহাম পর্যন্ত। বর্তমানে দুবাইয়ে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ৩৭৮.৫ দিরহাম এবং ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ৪০৮.৭৫ দিরহাম।

সিটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ১২ মাসে (২০২৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি) আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমে প্রতি আউন্সে ২,৮০০ থেকে ৩,০০০ মার্কিন ডলারের মধ্যে নেমে আসতে পারে। এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে মার্কিন অর্থনীতির সম্ভাব্য পুনরুদ্ধার এবং ২০২৫ সালের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

“২০২৫ ও ২০২৬ সালে স্বর্ণে বিনিয়োগের প্রবণতা হ্রাস পাবে। মার্কিন নির্বাচন ও অর্থনৈতিক গতি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বাজারে নতুন বার্তা দেবে।”

আরও পড়ুন: কালো টাকা সাদা করার বৈধতায় আপত্তি এনবিআরের

তবে এই পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত নন দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। কানজ জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিল ধানক বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে আমি বিশ্বাস করি, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দাম ৩,৮০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। স্বর্ণের প্রতি মানুষের আস্থা ও আগ্রহ আরও বাড়বে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি দাম ৩০০ দিরহামের নিচে নামে, তবে আবারও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বর্ণ কেনার আগ্রহ বাড়বে। 

এক স্বর্ণ বিক্রেতা জানান, স্বর্ণের দাম কমা মানেই সাধারণ মানুষের জন্য বিনিয়োগের নতুন সুযোগ। বিয়েসহ বিভিন্ন উপলক্ষে উপহার কেনার প্রবণতাও বাড়বে।

বর্তমান উচ্চমূল্যের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী ও ক্রেতা বাস্তব স্বর্ণের পরিবর্তে ডিজিটাল বিকল্প যেমন গোল্ড অ্যাকাউন্ট, ইটিএফ বা স্বর্ণ বিনিয়োগভিত্তিক অ্যাপের দিকে ঝুঁকছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এতে বাস্তব স্বর্ণ কেনার আগ্রহ কিছুটা হলেও হ্রাস পাচ্ছে।

দুবাইয়ের বাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজারেও স্বর্ণের দামে বড় পরিবর্তন এসেছে। দাম বাড়ানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

বুধবার (১৮ জুন) বাজুস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তেজাবি স্বর্ণের দাম কমায় ভরিতে ৫,৩৪২ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ১,৭২,৫৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট ১,৭২,৫৪৬ টাকা, ২১ ক্যারেট ১,৬৪,৬৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১,৪১,১৬৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতিতে ১,১৬,৭৮০ টাকা।

বাজুস জানায়, রাত থেকেই নতুন দাম কার্যকর হবে।

স্বর্ণের বাজারের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। অনেক কিছু নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনাবেচা, এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কার উপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণ কেনা হ্রাস করে, তাহলে ৩০০ দিরহামের নিচে দাম নামার সম্ভাবনা আরও জোরদার হবে।