News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

১ কাপ চায়ের দামে ১ কেজি আলু

১ কাপ চায়ের দামে ১ কেজি আলু

ফাইল ছবি

বর্তমান সময়ে ১ কাপ দুধ চায়ের দামে পাওয়া যাচ্ছে ১ কেজি আলু৷ চায়ের দাম ১৫ টাকা হলেও বাজারে আলুর দাম ১০-১২ টাকা কেজি হওয়ায় উৎপাদন খরচ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে আলুচাষীরা।  

অন্যান্য বারের তুলনায় রানীশংকৈলের কিছু অঞ্চলে এবার ব্যপক হারে আলুর চাষ করা হয়েছে। কিন্ত বাজারে তেমন দাম না থাকায় ভোগান্তিতে আলু চাষীরা৷ কিছুদিন আগে বাজারে প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রী করা হলেও এখন তা বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিতে। 

এদিকে গত বছরের তুলনায় বাড়তি দামে আলুর বীজ ক্রয় করে অল্প দামে বিক্রি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

রানীশংকৈল থানার কাশিপুর ইউনিয়নের আলু চাষী রহিম বলেন, আমি এবার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। প্রতি কেজি আলু বাজারে এখন মাত্র ১০ টাকা থেকে ১২টাকা দরে বিক্রী করতে হচ্ছে। এতে করে আমার লাভ তো দুরের কথা আমার সংসারের লবণ খরচও হয় না। তারপর আবার আমার সংসারে ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচ কিভাবে ম্যনেজ করবো আমি ভেবে পাচ্ছি না৷

এদিকে উপজেলার বনগাঁও গ্রামের আলু চাষী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এভাবে বাজারে আলুর দাম চলতে থাকলে আমাদের সার-কিটনাশকের খরচ টুকুও উঠবে না৷ 

রানীশংকৈল কাশিপুর গ্রামের সালাম জানান, বিঘা প্রতি যে খরচ হয়েছে তার তিনগুণ লোকশানে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। 

রানীশংকৈলের কিছু হাট-বাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে কেজি প্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায় আর পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়।

এ বিষয়ে রানীশংকৈল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, আলুর দাম বর্তমান বাজারে কিছুটা কম তবে আমরা আলু বাইরের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছি। এ পর্যন্ত ৫০০ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি করা হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন বাইরে রপ্তানি হলে আলুর দাম বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে সড়কে আলু ফেলে বিক্ষোভ কৃষকদের

উৎপাদন খরচ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গার আলুচাষীরাও। এবারে বেশি ফলন হলেও উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।

চুয়াডাঙ্গায় চাহিদার তুলনায় অধিক আলু চাষ করায় বাজারে আলুর দরপতন হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১২ টাকা দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন কৃষকেরা।

কৃষকেরা বলছেন, এ অবস্থায় থাকলে আগামী বছর এ চাষ বন্ধ করে দিতে হবে। যদি সরকারিভাবে বাইরের দেশ থেকে আলু আমদানি না করে। বাংলাদেশের কৃষকদের উৎপাদিত আলু বিদেশে রপ্তানি করা যায় তা হলে কিছুটা হলেও কৃষকরা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে ।

জীবননগর উপজেলার কন্দপপুর গ্রামের আলুচাষী আব্দুল আজিজ জানান, এ বছর ২৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে এবার ৮০-১০০ মণ আলু উৎপাদন হলেও বাজারে আলুর দাম নেই বললেই চলে। এক বিঘা জমিতে ৬৫-৭০হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু এখন পাইকারি দরে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজি ১০-১৩ টাকা দরে। এ দামে আগামী বছর আলু চাষ করা অনেক কষ্ট হয়ে যাবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হিজলগাড়ী গ্রামের আলুচাষী খোকন মিয়া বলেন, এ বছর লিজ নেওয়া ও নিজের জমি দিয়ে ১০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছিলাম। কিন্তু তোলার মুখে আলুর বাজারে এভাবে ধস লেগে যাবে এটা বুঝতে পারিনি। আলুর দাম যদি বৃদ্ধি না হয় তা হলে একদম পথে বসে যাব।

জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, জীবননগর উপজেলায় চাহিদার তুলনায় অধিক আলু চাষ করায় বাজারে আলুর দরপতন হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু।

চলতি মৌসুমে জীবননগর উপজেলায় ৯৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করেছেন কৃষকেরা। গত বছর জীবননগর উপজেলায় ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এ বছর আলুর ফলন ও বেশি  হয়েছে। তবে এ বছর নেপালে আলু রপ্তানি করা হচ্ছে, সে কারণে আরও একটু আলুর দাম পাবে। 

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়