খুলনায় বোরো ধানে শেষ মুহূর্তে ব্লাস্টের আক্রমণ, হতাশ কৃষক

ছবি: নিউজবাংলাদেশ
অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টির পাশাপাশি ডিজেল-সার-শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে এবার আমন চাষে বেগ পেতে হয়েছে উপকূলীয় জেলা খুলনার বোরো আবাদকারী কৃষকদের। অতিবৃষ্টিতে আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বোরো আবাদে আগ্রহ বাড়লেও ফসল ওঠার সময়ে মাজড়া ও ব্লাস্টের আক্রমণে দিশাহারা কৃষক। ফলন ভালো হলেও ছত্রাক জাতীয় ব্লাস্ট রোগের কারণে ক্ষেতের কাঁচা-পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের।
কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি অফিসের পরামর্শ না পেয়ে কোম্পানি ও কীটনাশক ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন তারা। বোরোর ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ মাজড়া ও ব্লাস্ট রোগে জমির ধান নষ্ট হয়েছে।
এবার বোরো মৌসূমে দেরিতে হলেও রেকর্ড পরিমাণ বোরো ধানের আবাদ হয়েছে খুলনায়। তাছাড়া আবাদের শুরুতে আবহাওয়া অনুক’লে থাকায় ধানের রোগ বালাই কম হযেছে। তবে শেষ মুহূর্তে ধান কাটার সমযে ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। ধানের শীষ ভেঙ্গে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে হতাশায় ভূগছেন বোরো আবাদকারীরা।
জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার মাধবকাটি বিলে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কৃষক ব্লাস্ট আক্রান্ত ক্ষেত দেখছেন। কোন কোন কৃষক দ্রুত ধান কেটে ফেলছেন সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায়।
ভূলটিয়া গ্রামের সুকৃতি বৈরাগী ধান মাড়াইকালে বলেন, ধানে মাজড়া পোকায় ক্ষতি করেছে। নাহলে আরও ফলন পেতাম। মাধবকাঠি বিলে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাচ্ছিলেন সাজিয়াড়া গ্রামের আরাফাত গাজী। তার প্রায় ৫ বিঘা জমিতে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে। বোরো আবাদকারী রুহুল আমিন জানালেন, অতিবৃষ্টিতে জমি জলাবদ্ধ থাকায় আমনের আবাদ করতে পারেননি। বোরো আবাদ করেছিলেন কিন্তু শেষ কালে এসে ব্লাস্টের অঅক্রমণ হওযায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, কম সময়ে ফলন বেশি ও দাম ভাল পাওযায় ব্রি-২৮ জাতের ধানের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বেশি। ব্লাস্ট রোগ শুধু ব্রি-২৮ জাতের ধানেই হয়। এই রোগ হলে ধানগাছের পাতা কালো ও শীষ শুকিয়ে নষ্ট এবং অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষেতের প্রায় সব ধান চিটা হয়ে যায়। আর কোনো ক্ষেতে এই রোগ হলে পাশের ভালো ধান ক্ষেতে ওষুধ না দিলে রাতারাতি ব্লাস্ট রোগ ওই সব ক্ষেতের ধানও নষ্ট করে দিতে পারে। কারণ ব্লাস্ট রোগটি মূলত আবহাওয়াজনিত কারণে বাতাসের সঙ্গে ছড়ায়। দিনে গরম রাতে ঠান্ডা অথবা রাতে গরম দিনে ঠন্ডা অর্থাৎ তাপমাত্রা ওঠানামা করলে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
সিলেটে অনাবৃষ্টিতে ব্লাস্টের ঝুঁকি, কম হতে পারে বোরো ধান উৎপাদন
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে ব্লাস্টের আক্রমণ হতে পারে। তবে ব্রি-২৮ জাত ও উফশি জাতের কিছু ধানের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, কিছু কিছু জমিতে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে ঠিকই তবে এতে কৃষকের ক্ষতি হবে না। এখনই ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কারণ ৮০ ভাগ ধান পেকে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অদিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, খুলনায় এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৬৫ হাজার হেক্টরের বেশি। অল্প পরিমাণ জমিতে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে যা হিসেবের মত না। ইতোমধ্যে আবাদকৃত ধানের ৬০ ভাগ কৃষক ধান কেটে ফেলেছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি