গরম থেকে মুক্তি: ২০৫০ সাল পর্যন্ত ঠাণ্ডা মৌসুমে হজ

ছবি: সংগৃহীত
আগামী ২৫ বছর সৌদি আরবে হজ অনুষ্ঠিত হবে তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা মৌসুমে—যেমন বসন্ত, শীত ও শরৎ। ২০২৫ সালের হজ ছিল গ্রীষ্মকালে অনুষ্ঠিত শেষ হজ। এরপর হজ ধীরে ধীরে ঠান্ডা ঋতুর দিকে সরে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে গরমজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে আসবে এবং হজপালনকারীরা পাবেন শারীরিকভাবে অধিক স্বস্তিকর এক পরিবেশ।
এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে সৌদি আরবের ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিটিওরলজি (NCM) এবং এর মুখপাত্র হুসেইন আল কাহতানি।
গালফ নিউজসহ মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক গণমাধ্যম এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রচার করেছে।
পরিবর্তনের মূল কারণ: চন্দ্রপঞ্জি ও মৌসুমচক্র
হজের সময় নির্ধারণ করা হয় হিজরি বর্ষপঞ্জির ভিত্তিতে, যা চাঁদের গতিপথ অনুসরণ করে চলে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের তুলনায় হিজরি বছর প্রায় ১১ দিন ছোট হওয়ায় প্রতিবছর হজের সময়কাল একটু করে এগিয়ে আসে। এই ধারাবাহিকতায় হজ প্রায় ৩০–৩৫ বছরের ব্যবধানে একবার চারটি মৌসুমই অতিক্রম করে—বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীত।
২০২৫ সালে হজ অনুষ্ঠিত হয় জুনের মাঝামাঝি, যখন মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাপমাত্রা ছিল ৪২ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই চরম গরমের পরিস্থিতি ছিল হাজিদের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। সৌদি কর্তৃপক্ষ এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল—যেমন ছায়াযুক্ত এলাকা, কুলিং ব্যবস্থা, পানির সরবরাহ ও পূর্বপ্রশিক্ষণ। এর ফলে গরমজনিত অসুস্থতার হার গত বছরের তুলনায় ৯০ শতাংশ কম ছিল, এবং কোনো হজযাত্রীর মৃত্যু হয়নি।
২০২৬–২০৫০: মৌসুমভিত্তিক হজ সূচি
সৌদি আবহাওয়া বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত নতুন হজ-পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২০৫০ সাল পর্যন্ত মৌসুমভিত্তিক হজের সময়সীমা হবে নিম্নরূপ:
সময়কাল মৌসুম সম্ভাব্য মাস
২০২৬–২০৩৩ বসন্ত মার্চ–মে
২০৩৪–২০৪১ শীত ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারি
২০৪২–২০৪৯ শরৎ সেপ্টেম্বর–নভেম্বর
২০৫০ গ্রীষ্ম আগস্ট
এই সূচি অনুযায়ী, আগামী প্রায় ২৫ বছর গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা থেকে মুক্ত থাকছে হজ মৌসুম। এরপর ২০৫০ সালে আবার হজ ফিরবে গ্রীষ্মকালে।
হজে স্বস্তির আবহাওয়া: স্বাস্থ্য ও ব্যবস্থাপনায় বড় সুবিধা
বিশ্বজুড়ে হজযাত্রীদের বড় অংশই বয়সে প্রবীণ বা বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোগেন। অতীতে তীব্র গরমে হজপালনের সময় হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে—২০২৪ সালে শুধু গরমজনিত কারণে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ১,৩০০ জনেরও বেশি।
আরও পড়ুন: হাজিদের ফিরতি ফ্লাইট শুরু
আসন্ন ঠান্ডা মৌসুমে হজ আয়োজন এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেবে। একদিকে হাজিরা স্বস্তিতে ইবাদত পালন করতে পারবেন, অন্যদিকে হজ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত সংস্থাগুলোর জন্যও হবে এটি কার্যকর—বিশেষ করে রসদ সরবরাহ, নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ, জনসমাগম ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে।
২০২৫ সালের হজ পরিসংখ্যান
- মোট হাজির সংখ্যা: ১৬,৭৩,২৩০ জন
- সৌদি নাগরিক: ১,৬৬,৬৫০ জন
- আন্তর্জাতিক হাজি: ১৫ লাখের বেশি
- বাংলাদেশ থেকে: ৮৭,১৫৭ জন
এই বিশাল আয়োজনে সৌদি সরকার গরম মোকাবিলায় যেভাবে প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করেছে, সেটি প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে।
হজের সময় পরিবর্তন: এক যুগান্তকারী পরিকল্পনা
এই পরিবর্তনকে শুধুই আবহাওয়ার সুবিধা হিসেবে দেখলে ভুল হবে। বরং এটি এক ধরনের ভবিষ্যৎমুখী স্মার্ট পরিকল্পনা। এটি হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক, নিরাপদ ও জনবান্ধব করে তুলবে।
বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিমের জন্য এটি এক স্বস্তির সংবাদ—তীব্র গরম নয়, এখন তারা অপেক্ষাকৃত শীতল পরিবেশে পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন, শারীরিক কষ্ট ছাড়াই।
সংক্ষেপে বলা যায়, আবহাওয়ার দিক থেকে ২০২৫ সালের হজ ছিল একটি যুগান্তকারী মোড়। সেই সঙ্গে ২০২৬ সাল থেকে শুরু হচ্ছে তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক এক নতুন হজ-যুগ। ভবিষ্যতের এই পরিকল্পনা শুধু হাজিদের জন্য নয়, পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্যই এক আশার আলো।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি