ঈদে অপতৎপরতা ঠেকাতে জিরো টলারেন্স র্যাব

ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে দেশজুড়ে পশুর হাট, ঘরমুখো মানুষের যাত্রা, আর্থিক লেনদেন ও অনলাইন ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্রিক অপতৎপরতা ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধে ঢাকাসহ সারা দেশে গৃহীত হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
মঙ্গলবার (৩ জুন) একাধিক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিরাপত্তা পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ঈদুল আজহা ঘিরে নিয়মিতভাবে এক হাটের গরু জোর করে অন্য হাটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা সামনে আসে। এ ধরণের অপতৎপরতা রোধে এবার কঠোর অবস্থানে র্যাব।
গাবতলী পশুর হাটে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হলে কিংবা কোনো অভিযোগ পাওয়া মাত্রই সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে পশুবাহী যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
র্যাব-৪ গাবতলীসহ মিরপুর বেনারসি পল্লী ও পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছে। হাটে স্থাপিত হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার ও কন্ট্রোল রুম। প্রতিটি হাটে র্যাব সদস্য ও গোয়েন্দা ইউনিট সাদা পোশাকে মোতায়েন রয়েছে, যারা চুরি, ছিনতাই, প্রতারণা, মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের সবচেয়ে বড় হাট গাবতলীসহ সকল হাটে পশু পরিবহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহাসড়কগুলোতেও বাড়ানো হয়েছে র্যাবের টহল।
পশুর হাটে প্রচুর নগদ লেনদেন হয়। এই সুযোগে কিছু অসাধু চক্র জাল টাকা ছড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। র্যাব হাটে কন্ট্রোল রুমে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন করেছে, যেখানে সাধারণ জনগণ সরাসরি সেবা নিতে পারবে। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে জাল টাকা প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী চক্রের গতিবিধির ওপর কঠোর নজর রাখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঈদযাত্রায় বাসে ছদ্মবেশী ডাকাত ঠেকাতে ছবি বাধ্যতামূলক
কৃত্রিম উপায়ে রাসায়নিক প্রয়োগে পশু মোটাতাজাকরণ এবং অসুস্থ গবাদি পশুর বিক্রি রোধে র্যাব পশু চিকিৎসকের সহায়তায় তল্লাশি চালাচ্ছে। যেখানে এমন অনিয়ম ধরা পড়ছে, সেখানে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
পশুর হাটে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত হাসিল তালিকা দৃশ্যমান রাখতে হবে। নির্ধারিত হারের বেশি হাসিল আদায়ের চেষ্টা করলেই তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। একইসঙ্গে গাবতলী বাস টার্মিনালসহ যাত্রী চাপে ভোগা এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, টিকিট সিন্ডিকেট ও কালোবাজারি প্রতিরোধে চলমান রয়েছে মোবাইল কোর্ট।
চলতি বছরে অনলাইন কোরবানির পশু কেনাবেচার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষিতে র্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল ২৪ ঘণ্টা ভার্চুয়াল জগতে নজরদারি করছে। র্যাব সাধারণ জনগণকে অনলাইন লেনদেনে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছে এবং প্রতারণার শিকার হলে কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ জানানোর অনুরোধ জানিয়েছে।
পশুর হাট, বিপণি বিতান ও জনসমাগমস্থলে নারীদের হয়রানি রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি বিশেষ টহল ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে। ঈদের জামাত, চামড়া বেচাকেনা এবং শহর ফাঁকা থাকায় বাড়ি ফেরা মানুষদের জানমাল রক্ষায় প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিগত বছরগুলোতে বাজার ধসের পেছনে সক্রিয় থাকা সিন্ডিকেট চিহ্নিত করতে এবং তাদের অপতৎপরতা রুখতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করেছে। যেকোনো প্রমাণ পাওয়া মাত্রই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
র্যাব মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এ জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ঈদুল আজহার মতো একটি উৎসবমুখর ধর্মীয় আয়োজনকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, তা নিশ্চিতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
তিনি জানান, দেশব্যাপী সব হাট, মহাসড়ক, বাস টার্মিনাল, ফেরিঘাট ও জনবহুল স্থানে গোয়েন্দা তৎপরতা এবং বিশেষ টহল অব্যাহত থাকবে। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অপরাধ চক্রের গতিবিধিও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ঈদে ঘরমুখো মানুষ, পশু ব্যবসায়ী এবং সাধারণ ক্রেতা—সবাই যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে কোরবানির উৎসব পালন করতে পারেন, সেজন্য র্যাব সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। যেকোনো অভিযোগ বা সহায়তার প্রয়োজন হলে র্যাবের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে সর্বসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি