নাইজেরিয়ায় আকস্মিক বন্যায় নিহত ১৫১

ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় নাইজার রাজ্যের মোকওয়ায় আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ১৫১ জনে।
গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হওয়া এই দুর্যোগে ধ্বংস হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে, নিখোঁজ রয়েছেন শতাধিক।
শনিবার (৩১ মে) নাইজার রাজ্যের জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার (NSEMA) মুখপাত্র ইব্রাহিম আওদু হুসেইনি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বন্যায় ৫০০-৫৩০টি পরিবারের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়েছে। ধ্বংস হয়েছে ২৫০-৩০০টির বেশি ভবন ও দুটি বড় সেতু। নাইজার নদীর তীব্র স্রোত মরদেহ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অনেক দূর, যার ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মোকওয়া শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরেও মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
রেড ক্রসের স্থানীয় শাখার প্রধান গিডিয়ন আদামু জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১২১ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে ডেইলি ট্রাস্ট পত্রিকার দাবি অনুযায়ী, বন্যায় একটি ইসলামিক স্কুলের ৫০ জনেরও বেশি শিশু নিখোঁজ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই দুর্যোগের মাত্রা নজিরবিহীন।
সরকারি কর্মচারী মোহাম্মদ তানকো বলেন, আমরা সব হারিয়েছি। আমাদের বাড়ি ছিল যেখানে, এখন কিছুই নেই। পরিবারে অন্তত ১৫ জনকে হারিয়েছি।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধবিমান হারানোর কথা স্বীকার করলো ভারত
অন্যদিকে, জেলে দানজুমা শাবা জানান, আমি এখন গাড়ি পার্কিংয়ে ঘুমাচ্ছি। আমার থাকার কোনো জায়গা নেই, বাড়িটা ধ্বংস হয়ে গেছে।
আল জাজিরার রিপোর্টার আহমেদ ইদ্রিস জানান, সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ১৫১ বলা হলেও, স্থানীয়দের মতে এই সংখ্যা দুই থেকে চারগুণ বেশি হতে পারে। অনেক মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপ বা নদীর পানিতে আটকে আছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের দুর্যোগ শুধু প্রাকৃতিক কারণে নয়, দুর্বল অবকাঠামো, অব্যবস্থাপনায় নির্মাণ, এবং অপর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ফলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
নাইজেরিয়ার জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (NEMA) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৪ সালেই দেশটির ৩৬টির মধ্যে ৩১টি রাজ্যে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন মানুষ। ওই বছর ১২শ’র বেশি মৃত্যু এবং ১২ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছিলেন, যা সাম্প্রতিক দশকের সবচেয়ে বড় দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আবহাওয়াবিদদের সতর্কতা অনুযায়ী, সামনে আরও বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন এক বছরে যে বৃষ্টির পরিমাণ হওয়ার কথা, তা মাত্র এক-দুই মাসেই হয়ে যাচ্ছে, এবং জনগণ বা অবকাঠামো এই ধরনের চরম আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।
জাতীয় দুর্যোগ সংস্থাগুলো পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীর প্রবাহপথ পরিষ্কার রাখা, নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি স্থাপন রোধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি