News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:২৪, ৯ জুন ২০২৫
আপডেট: ২১:৩৭, ৯ জুন ২০২৫

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন, আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন, আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস নিয়ে দেশে ফের বাড়ছে উদ্বেগ। পাঁচ বছর আগে যে ভাইরাস বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল, সেটি আবারও নতুন রূপে ফিরে আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও হঠাৎ সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনের পরিসংখ্যান বলছে, করোনায় আক্রান্তের হার বাড়ছে, যদিও মৃত্যুর সংখ্যা এখনও স্থিতিশীল রয়েছে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫ জন শিশু। যদিও মৃত্যুর কোনো খবর নেই, এই পরিসংখ্যান আগামী দিনের জন্য এক ধরনের সতর্ক সংকেত বলেই মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার (৯ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত এক দিনে ৩০ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়েছেন।

তবে একইসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিভাগ বলছে— এই সংখ্যাগুলো সামান্য হলেও অবহেলার সুযোগ নেই, বিশেষ করে যখন শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের, এবং সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৩ জন। করোনার সামগ্রিক শনাক্ত হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ, যা মহামারির দীর্ঘ পথচলায় বেশ উল্লেখযোগ্য এক চিত্র তুলে ধরে।

রবিবার (৮ জুন) চার জনের নমুনা পরীক্ষায় তিন জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। সেখানে সোমবার মাত্র ৪১টি নমুনা পরীক্ষায় ধরা পড়ে নতুন পাঁচটি সংক্রমণ। 

এর অর্থ, দিনে দিনে শনাক্তের হার বেড়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ। আগের দিনগুলোর তুলনায় এই হার লক্ষণীয়। পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬ জন, যা সামান্য হলেও কিছুটা স্বস্তির ইঙ্গিত দেয়।

এর আগে, দীর্ঘ বিরতির পর ৫ জুন (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে একজন পুরুষ রোগীর মৃত্যু হয়, যা সংশ্লিষ্টদের সতর্কতার মাত্রা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কেবল বাংলাদেশেই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়। প্রতিবেশী ভারতেই গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৭৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এবং ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: কোভিড হটস্পট ভারত, ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার বার্তা

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরগুলোতে বাড়ানো হয়েছে স্ক্রিনিং ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা। সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছে মাস্ক পরার পরামর্শ, বিশেষত জনসমাগমপূর্ণ স্থান, হাসপাতাল এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিকদের জন্য।

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট JN.1 সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ভ্যারিয়েন্টটি দ্রুত ছড়ালেও তুলনামূলকভাবে মৃদু উপসর্গ তৈরি করছে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ভাইরাস চরিত্র বদলে শক্তিশালী রূপ নিতে পারে যেকোনো সময়।

ডা. লেলিন চৌধুরী, হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক বলেন, এই মুহূর্তে করোনা, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, টাইফয়েড—সবমিলিয়ে সংক্রমণজনিত রোগের প্রকোপ চলছে। এর সঙ্গে করোনার নতুন ধরন যুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। আমাদের উচিত মাস্ক ব্যবহার, সচেতনতা এবং জ্বর হলে পরীক্ষা করানো।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে অসতর্কতা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে। তাই সচেতন থাকতে হবে, গুজবে কান না দিয়ে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

এদিকে তথ্য অধিদফতর থেকে রবিবার প্রচারিত এক পৃথক বিবৃতিতে জনসাধারণকে নতুন করে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের ভিড়যুক্ত এলাকা এড়িয়ে চলা এবং প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদের পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, সংক্রমণ হারের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সবাইকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের এই ধরনের স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, কেবলমাত্র উপসর্গ থাকলে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম, তাদের জন্য চতুর্থ ডোজ টিকা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। 

নতুন পরিস্থিতিতে করণীয় কী?

১. ভিড় এড়িয়ে চলা: বিশেষ করে যাদের বয়স বেশি বা যাদের পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য জটিলতা রয়েছে, তাদের জনসমাগমে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

২. ঘন ঘন হাত ধোয়া ও মাস্ক ব্যবহার: যদিও বাধ্যতামূলক নয়, বিশেষজ্ঞরা পুনরায় এসব অভ্যাসে ফেরার পক্ষে মত দিয়েছেন।

৩. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই যেন অবহেলা না করে চিকিৎসা নেওয়া হয়।

করোনাভাইরাস হয়তো আর আগের মতো ভয়ংকর নয়, তবে নিশ্চিন্তে বসে থাকার সময় এখনও আসেনি। শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ, শনাক্ত হার ও মৃত্যু সংখ্যা বিবেচনায়—জনসচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই হতে পারে করোনা মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়