নারী শক্তির নতুন উচ্চতা, সাফল্যের সপ্তম সিঁড়িতে টাইগ্রেস

আইসিসির প্রকাশিত নারীদের হালনাগাদকৃত ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে সুখবর নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রস্তুতির সময়েই র‍্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ অগ্রগতি দেখিয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির নেতৃত্বাধীন টাইগ্রেসরা। 

আগের অষ্টম স্থান থেকে উঠে এসেছে সপ্তম স্থানে, যেখানে তারা পিছনে ফেলেছে প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে।

বুধবার (১৪ মে) আইসিসি ঘোষিত তালিকায় বাংলাদেশ নারীরা বর্তমানে ৭৯ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে। পাকিস্তানের অবস্থান এখন অষ্টম, তাদের পয়েন্ট ৭৮। আর ১০ রেটিং পয়েন্ট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ নেমে গেছে নবম স্থানে (৭২ পয়েন্ট)। র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান যথারীতি দখলে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া (১৬৭ পয়েন্ট)। এরপর রয়েছে ইংল্যান্ড (১২৭), ভারত (১২১), নিউজিল্যান্ড (৯৬), দক্ষিণ আফ্রিকা (৯০) এবং শ্রীলঙ্কা (৮২)।

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, র‍্যাঙ্কিংয়ের জন্য দুটি সময়সীমার পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে—২০২২ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালকে ৫০% ও ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালকে ১০০% বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

৫০% বিবেচিত সময়কালে বাংলাদেশ নারী দল মোট ১৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে জয় পেয়েছে মাত্র ৩টিতে। ৯টিতে হেরেছে, ৩টি ম্যাচ ফলবিহীন ছিল। বাকি দুই ম্যাচ টাই হয়, যার মধ্যে একটি সুপার ওভারে ভারতকে পরাজিত করেছিল টাইগ্রেসরা।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে শতভাগ বিবেচনায় নেওয়া সময়কালে টাইগ্রেসদের পারফরম্যান্স ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত। গত এক বছরে খেলা ১১টি ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে ৭টিতে জয় পেয়েছে তারা। এই ধারাবাহিকতা র‍্যাঙ্কিংয়ে সরাসরি প্রতিফলন ঘটিয়েছে। 

আরও পড়ুন: ৬ কোটিতে আইপিএলে ফিরলেন মোস্তাফিজ

২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সরাসরি খেলার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচের সিরিজে ব্যর্থতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এরপর বাছাইপর্বে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে টাইগ্রেসরা।

আইসিসি এরই মধ্যে ২০২৫-২০২৯ চক্রের জন্য নারীদের ওয়ানডে মর্যাদার দেশগুলোর তালিকা হালনাগাদ করেছে। সেখানে নতুন সংযোজন হিসেবে যুক্ত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারা বাদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। বর্তমানে মোট ১৬টি দল ওয়ানডে মর্যাদাপ্রাপ্ত, যার মধ্যে ৫টি সহযোগী দেশ—থাইল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পাপুয়া নিউ গিনি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

তবে র‍্যাঙ্কিং তালিকায় ১৫টি দল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শেষ পাঁচটি স্থানে আছে থাইল্যান্ড (৪৪), স্কটল্যান্ড (৪৪), নেদারল্যান্ডস (২৩), জিম্বাবুয়ে (১৬), এবং পাপুয়া নিউ গিনি (ধাপ এগিয়ে ১৫তম)।

র‍্যাঙ্কিংয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হলে প্রতিটি দলকে তিন থেকে চার বছরের ব্যবধানে কমপক্ষে আটটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে হয়।

বাংলাদেশের পুরুষ ক্রিকেট দল বর্তমানে ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে অবনমন ঘটিয়ে দশম স্থানে রয়েছে। টানা ব্যর্থতা, ধারাবাহিকতার অভাব ও পারফরম্যান্সে ঘাটতি এর পেছনের বড় কারণ। এমন সময়ে বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্য কিছুটা হলেও ক্রিকেট ভক্তদের মুখে হাসি এনে দিয়েছে।

নিগার সুলতানার নেতৃত্বে গড়ে উঠা নারী দল এখন শুধু র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করছে না, বরং ধারাবাহিকভাবে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করে চলেছে। তাদের এমন পারফরম্যান্স ভবিষ্যতের জন্য নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে দেশের ক্রিকেটে।

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে একটি বড় মাইলফলক। যেখানে এক সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের নামই তেমন পরিচিত ছিল না, এখন তারা র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দশের মধ্যে, পাকিস্তানের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আগামী দিনে আরও বড় অর্জন সম্ভব।