News Bangladesh

স্পোর্টস ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ৪ জুন ২০২৫

আইপিএল জয় উদযাপনে ভিড়ের জেরে প্রাণহানি

আইপিএল জয় উদযাপনে ভিড়ের জেরে প্রাণহানি

ছবি: সংগৃহীত

১৮ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে প্রথমবারের মতো আইপিএল ট্রফি জিতে ইতিহাস গড়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)। তবে বিজয়ের এই আনন্দঘন মুহূর্তটি পরিণত হয়েছে ভয়াবহ এক ট্র্যাজেডিতে। 

বুধবার (৪ জুন) বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৫ জন।

বিশাল জনসমাগম সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তা বাহিনীকে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে দেখা দেয় আরও বিশৃঙ্খলা। আহতদের আশেপাশের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়; বেশিরভাগকেই আনা হয় শহরের বাউরিং হাসপাতালে।

বেঙ্গালুরুর ট্র্যাফিক পুলিশ ও সিটি পুলিশের মতে, ভিড় নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়েছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা সদস্য। 

কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার এক বিবৃতিতে জানান, এটি ছিল একটি তরুণ, উদ্দীপনাপূর্ণ জনতা — তাদের উপর বলপ্রয়োগ করা সম্ভব ছিল না। তবে অতিরিক্ত ভিড় এবং অব্যবস্থাপনার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।

মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে আহমেদাবাদ থেকে ট্রফি হাতে চার্টার্ড বিমানে বেঙ্গালুরু ফেরেন কোহলি ও তার দল। বিমানবন্দর থেকেই শুরু হয় উদযাপন। দল পৌঁছানোর বহু আগেই সেখানে জড়ো হয় হাজারো সমর্থক। পরে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে দলের সংবর্ধনার আয়োজনে এই জনতার ঢল আরও ঘনীভূত হয়। অনেকেই স্টেডিয়ামের ভিতরে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন, যা পরে বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয়। 

আরও পড়ুন: সমিত সোম এখন ঢাকায়

স্টেডিয়ামের বাইরের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী বেঙ্গালুরু মেট্রো স্টেশনগুলিতেও দেখা যায় অসংখ্য মানুষের ভিড়। ট্রেন থেকে নেমেই ভক্তরা ছুটে আসেন স্টেডিয়ামের দিকে। ভিড় সামলাতে গিয়ে বারবার বাধা সৃষ্টি হয় জন চলাচলে। 

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত থেকেই তারা জনসমাগম পর্যবেক্ষণ করছিল এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিল।

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ভেতরে তখন অন্য চিত্র। মাঠে তখন রঙিন আলোর ঝলক, ব্যান্ড পারফরম্যান্স, ট্রফি উঁচিয়ে ধরা কোহলি, প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘চ্যাম্পিয়ন্স’। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার উপস্থিতিতে খেলোয়াড়দের পরানো হয় উত্তরীয়, পাগড়ি ও মালা। পুরো দল পরেছিল লাল রঙের টি-শার্ট, যার গায়ে বড় অক্ষরে লেখা ছিল ‘CHAMPIONS’।

তবে বাইরে তখন কান্না ও আতঙ্ক। ঘটনার সময় স্টেডিয়ামের মূল ফটকের আশপাশে পড়ে ছিলেন অনেকে। দেরিতে হলেও অ্যাম্বুলেন্স এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। 

এক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, মানুষ হুড়োহুড়ি করছিল। নিরাপত্তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। কেউ কাউকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছিল না।

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর প্রথম শিরোপাজয়ের আনন্দ যেমন গর্বের, তেমনি উদযাপন ঘিরে ঘটে যাওয়া প্রাণঘাতী ঘটনা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বেঙ্গালুরু প্রশাসনের বিরুদ্ধে উঠছে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ। একাধিক মানবাধিকার সংস্থা ও নাগরিক সংগঠন এরইমধ্যে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত দাবি করেছে। 

স্থানীয় প্রশাসনও জানিয়েছে, ঘটনা তদন্তে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে।

এই ঘটনায় প্রমাণিত হলো, কেবল আবেগ দিয়ে বড়সড় জনসমাগম সামলানো যায় না; প্রয়োজন পরিকল্পিত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, যা এদিন ছিল না।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়