অস্ট্রিয়ায় স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৯

অস্ট্রিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গ্রাজের একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরও অনেকে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে এখনও নিহত ও আহতদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ না করলেও, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী হামলার ভয়াবহতা দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।

মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে স্থানীয় সময় আনুমানিক ১০টার দিকে বোর্গ ড্রেইয়ার্সচুটজেনগাসে নামক উচ্চ বিদ্যালয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটে। 

হামলার পরপরই পুলিশ ও সশস্ত্র বিশেষ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। আকাশপথে মোতায়েন করা হয় হেলিকপ্টার, এবং স্কুলের চারপাশ ঘিরে নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘ওআরএফ’ ও প্রভাবশালী দৈনিক ‘ক্রোনেন জেইতুং’-এর তথ্য অনুযায়ী, বন্দুকধারী ব্যক্তি ওই স্কুলেরই একজন সদস্য ছিলেন—যিনি হামলার পর স্কুলের শৌচাগারে ঢুকে আত্মহত্যা করেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে হামলাকারীর পরিচয় ও উদ্দেশ্য এখনও নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।

গ্রাজ পুলিশের মুখপাত্র সাবরি ইয়রগুন এক বিবৃতিতে বলেন, সকাল ১০টা নাগাদ একটি ফোনকল পাওয়ার পর আমরা দ্রুত অভিযান শুরু করি। সকাল ১১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে স্কুলটি সম্পূর্ণ খালি করে ফেলা হয় এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল ৬০ জনের

এই ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে এবং জনসাধারণকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ জনগণকে সতর্ক করে জানায়, জরুরি নিরাপত্তা তৎপরতা এখনো চলমান, সকলকে পুলিশি নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করছি।

অস্ট্রিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গ্রাজ—যেটি স্টাইরিয়া প্রদেশের রাজধানী—প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাসের শহর হলেও, এমন ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী আগে কখনো হয়নি। শহরের শান্ত জনজীবন হঠাৎ করেই এক ভয়াল বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো হামলার পেছনের সম্ভাব্য কারণ, হামলাকারীর মানসিক অবস্থা কিংবা পূর্ব কোনো নিরাপত্তা সংকেত ছিল কিনা—তা নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এ ঘটনার পর দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় অস্থায়ীভাবে গ্রাজ শহরের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে।

এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় শোক প্রকাশ করে বলেছেন, এটি আমাদের জাতির জন্য এক অন্ধকার দিন। নিহতদের পরিবার ও গ্রাজবাসীর প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাই।

আন্তর্জাতিক মহলেও ঘটনার নিন্দা জানানো হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই হামলার দ্রুত তদন্ত এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি রোধে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।

এই প্রতিবেদন প্রণয়নে বিবিসি, ওআরএফ, ক্রোনেন জেইতুংসহ একাধিক সূত্রের তথ্য যাচাই-বাছাই করে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা ঘটনাটির সর্বশেষ ও নির্ভরযোগ্য চিত্র তুলে ধরেছে। ঘটনার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং অস্ট্রিয়ান কর্তৃপক্ষ যেকোনো নতুন তথ্য উদঘাটন করলে প্রতিবেদন হালনাগাদ করা হবে।