তৃতীয় দিনেও থামেনি আগুন, উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস

ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ বিরুদ্ধে দমন অভিযানের জেরে টানা তৃতীয় দিনের মতো ভয়াবহ সহিংস বিক্ষোভ চলছে লস অ্যাঞ্জেলেসে।
সপ্তাহান্তজুড়ে বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে শহরের ডাউনটাউন এলাকায় একপ্রকার রণক্ষেত্রের চিত্র দেখা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিক্ষোভকারীরা মুখোমুখি অবস্থানে, পরস্পরের ওপর কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট, ইট-পাথর ও জলন্ত বস্তু ছুঁড়ছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে অন্তত ২,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৩০০ সেনা মোতায়েন করা হলেও পরে আরও ৫০০ মেরিন সেনাকে প্রস্তুত রাখা হয় এবং শনিবার রাতে প্রেসিডেন্টের জারি করা স্মারকলিপিতে সেনা সংখ্যা ২,০০০-এ উন্নীত করার কথা জানানো হয়।
এটি ১৯৬৫ সালের পর প্রথমবারের মতো যখন একটি অঙ্গরাজ্যের অনুমতি ছাড়াই সেখানে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করল ফেডারেল সরকার। বিষয়টি নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তিনি একে ‘উসকানিমূলক’ পদক্ষেপ আখ্যা দিয়ে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় না করেই সেনা নামিয়েছে, যা স্পষ্টভাবে প্রশাসনিক নিয়ম লঙ্ঘনের শামিল।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছিলেন, তিনি গভর্নর নিউসমের সঙ্গে ফোনালাপে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
কিন্তু নিউসম সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে এনবিসিকে বলেন, তিনি (ট্রাম্প) একেবারে ঠাণ্ডা মাথার মিথ্যাবাদী। আমরা কখনো এই বিষয় নিয়ে কথা বলিনি।
এদিকে, লস অ্যাঞ্জেলেসের মেট্রোপলিটন ডিটেনশন সেন্টারের কাছে রবিবার বিকেলে সংঘটিত সহিংসতায় বিক্ষোভকারীরা ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
সিবিএস নিউজ-এর লাইভ ফুটেজে দেখা গেছে, কাঁদানে গ্যাস ও ফ্ল্যাশ ব্যাং ব্যবহারের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে সেনাবাহিনী, পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা বোতল, ইট-পাথর ও আগুন জ্বালানো বস্তু ছুড়ে মারে।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ১৫
আল-জাজিরা জানায়, বিক্ষোভকারীরা ফ্রি-ওয়ে ১০১-এ একটি পুলিশের গাড়ি এবং গুগলের স্বচালিত গাড়ি ওয়েমোর দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার পর ফ্রি-ওয়ে ১০১ বন্ধ ঘোষণা করে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এলএপিডি)। শহরের পুরো ডাউনটাউন অঞ্চলকে ‘অবৈধ সমাবেশ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রবিবার রাত পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়, যা শনিবারের ২৯ জনসহ মোট গ্রেফতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ জনে।
এলএপিডি প্রধান জিম ম্যাকডোনেল সাংবাদিকদের জানান, আমরা কোনোভাবেই সিভিল ইমিগ্রেশন প্রয়োগে অংশ নিচ্ছি না। আমাদের বিভাগ ক্যালিফোর্নিয়া ভ্যালুস অ্যাক্ট (এসবি ৫৪) মেনে চলে, যা আমাদের ফেডারেল ইমিগ্রেশন কার্যক্রমে সহায়তা করা থেকে বিরত রাখে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একের পর এক পোস্টে চলমান বিক্ষোভকে ‘চালচতুর ডেমোক্র্যাটদের খেলা’ এবং বিক্ষোভকারীদের ‘বেতনভোগী বিশৃঙ্খলাকারী’ বলে আখ্যা দেন।
তিনি গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস-কে ‘ব্যর্থ নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাদের লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
এদিকে, গভর্নর নিউসমও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সহযোগিতার হাত থেকে।
তিনি বলেন, আমি সবসময় দায়িত্বশীলভাবে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু তার স্বৈর আচরণে কাজ করার পথ নেই। তিনি কেবল চান সবাই তার হয়ে কাজ করুক— আমি কখনোই তা করব না।
এই সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ফেডারেল অভিবাসন নীতি বনাম ক্যালিফোর্নিয়ার প্রগতিশীল রাজনীতি। অভিবাসন বিরোধী অভিযান নিয়ে শুরু হওয়া জনরোষ এখন স্পষ্টভাবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য প্রশাসনের মুখোমুখি অবস্থানে গড়িয়েছে। একদিকে হোয়াইট হাউসের শক্ত অবস্থান, অন্যদিকে রাজ্য প্রশাসনের প্রতিরোধ— ফলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি