গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজ দখলে নিল ইসরায়েল, সাংবাদিকসহ আটক ১৩

গাজার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) পরিচালিত জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ দখল করেছে ইসরায়েল। জাহাজটি ইতালির সিসিলি দ্বীপের কাতানিয়া বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। তবে গাজার উপকূলে পৌঁছার আগেই আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে একে জোরপূর্বক ইসরায়েলের আশদাদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

সোমবার (৯ জুন) ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়া ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বখ্যাত পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ (২২), ফরাসি চিকিৎসক বাপতিস্ত আন্দ্রে, আল জাজিরার সাংবাদিক ওমর ফায়াদ, ব্রাজিলিয়ান কর্মী ও ফ্রিডম ফ্লোটিলা ব্রাজিলের সমন্বয়ক থিয়াগো অ্যাভিলা, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এমইপি ও মানবাধিকারকর্মী রিমা হাসান, তুর্কি মানবাধিকারকর্মী সুয়াইব ওর্দু এবং ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের আরও কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে ম্যাডলিনকে 'সেলফি ইয়ট' আখ্যা দিয়ে অভিযাত্রাটিকে ‘নাটকীয় প্রচারণা’ বলে দাবি করা হয়েছে। ওই পোস্টে বিশেষভাবে পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে অভিযুক্ত করা হয়।

এই ঘটনার কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স ইউনিভার্সিটির আইন অধ্যাপক আদিল হক। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, “অপমানজনক আচরণ একটি যুদ্ধাপরাধ।”

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম অধিকার সংস্থা সিএআইআর বলেছে, “ম্যাডলিন জাহাজে হামলা একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা।”

আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ১০৮

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রানচেসকা আলবানিজ বলেন, “ইসরায়েল গাজা নিয়ন্ত্রণ করে না, তবুও অবরোধ বজায় রেখেছে। এটি প্রত্যাহার করতে হবে এবং গাজাবাসীদের সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।”

ত্রাণবাহী এই জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছে গাজার প্রথম ও একমাত্র নারী মৎস্যজীবী ম্যাডলিন-এর নাম অনুসারে। এতে ছিল গাজার জন্য অত্যন্ত জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী, খাদ্য (ময়দা, চাল), শিশুদের দুধ ও ডায়াপার, নারীদের স্যানিটারি পণ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ কিট, ক্রাচ এবং কৃত্রিম অঙ্গ।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, গাজার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ চরম খাদ্যসংকটে রয়েছেন। ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে। এর ফলে অনাহারে মারা গেছে বহু শিশু।

মানবিক ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা দিয়ে আটকাদেশ এবং কটূক্তি করায় আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের এ পদক্ষেপকে ‘অমানবিক এবং বেআইনি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।