অভিবাসন ইস্যুতে লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ, সেনা মোতায়েন

ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানকে ঘিরে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। নথিবিহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিবাদে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ দমন করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। প্রেসিডেন্টের নির্দেশে এই বাহিনী বিক্ষোভ-প্রবণ এলাকাগুলোতে অবস্থান নিতে শুরু করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার (৬ জুন) রাতে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ৪৪ জন অভিবাসীকে ‘আইন লঙ্ঘনের’ অভিযোগে আটক করে। সপ্তাহজুড়ে অভিযানে গ্রেফতারের সংখ্যা ১১৮-তে পৌঁছায়।
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে লস অ্যাঞ্জেলেসের সাউথইস্ট অঞ্চলের লাতিন অধ্যুষিত প্যারামাউন্ট জেলায়। শনিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শতাধিক বিক্ষোভকারী আইসিই-র বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। অনেককে গ্যাসমাস্ক পরে দেখা গেছে, কেউ কেউ মেক্সিকোর পতাকা উড়িয়েছেন।
বিক্ষোভ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে, লাঠিচার্জ করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় রাস্তায় উল্টানো শপিং কার্ট ও গ্যাস গ্রেনেডের দৃশ্য টিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটকও করা হয়, তবে কতজনকে ধরা হয়েছে—তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সীমান্ত বিষয়ক উপদেষ্টা টম হোমান জানান, নাগরিকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েই সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসকে আরও নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই আমরা।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে পেন্ডেলটন সেনা ছাউনিতে অবস্থানরত মেরিন সেনাদের মোতায়েন করা হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের উপপ্রধান স্টিফেন মিলার বিক্ষোভকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি একটি হিংস্র বিদ্রোহের রূপ নিচ্ছে।
এফবিআই এক বিবৃতিতে জানায়, যারা অভিযান ঠেকাতে অরাজকতা করছে, তাদের আটক করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যা করা দরকার, তাই করা হবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে ‘উসকানিমূলক’ ও ‘নিষ্ঠুর’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন সচেতনভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হবে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ডেমোক্র্যাট মেয়র ক্যারেন ব্যাস বলেন, এই বর্বর অভিযান শহরের শান্তি বিঘ্নিত করছে। আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেব।
এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, যদি নিউসাম ও মেয়র ক্যারেন ব্যাস তাদের কাজ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে ফেডারেল সরকার পরিস্থিতি নিজের হাতে নেবে—যেভাবে দাঙ্গা ও লুটপাট থামাতে হয়, ঠিক সেভাবে।
চিরলা (CHIRLA) নামক অভিবাসন অধিকার সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাঞ্জেলিকা সালাস জানান, শুক্রবার আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে আইনজীবীরা এখনও দেখা করতে পারেননি, যা চরম উদ্বেগজনক।
আরও পড়ুন: নির্বাচনী প্রচারে মাথায় গুলিবিদ্ধ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
চিরলার অভিযোগ, আইসিই সদস্যরা হোম ডিপো দোকানের পার্কিং লটে বেস ক্যাম্প করে অভিযান চালিয়েছে, যেখানে ফুটপাত ব্যবসায়ী ও দিনমজুরদের লক্ষ্য করা হয়। অভিযান চালানো হয় একটি পোশাক কারখানা ও একটি গুদামে।
আইসিই-র এক অভিযানের সময় প্যারামাউন্টের হোম ডিপোর কাছে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়।
মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান মাইকেল ডব্লিউ ব্যাঙ্কস জানান, সেখানেই একটি সহিংস বিক্ষোভ শুরু হলে একজন ফেডারেল এজেন্টের ওপর হামলার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া রন গোচেজ বলেন, এখন ওরা বুঝে গেছে, আমাদের জনগণ যেখানে আছে সেখানে গিয়ে কাউকে তুলে নেওয়া যাবে না। প্রতিটি এলাকায় সংগঠিত ও কঠিন প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।
এই ঘটনাবলি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসনবিরোধী নীতির আরও কঠোর রূপ প্রকাশ করছে। প্রতিদিন ৩ হাজার অভিবাসী আটক করার লক্ষ্য এবং নির্বিচারে অভিযান একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আইন বাস্তবায়নের তৎপরতা দেখালেও, অন্যদিকে তা মানবাধিকার, আইনি অধিকার ও সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি