ঈদের সকালে মৃত্যু নেমে এলো গাজায়

ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র ঈদুল আজহার দিনেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম হামলা অব্যাহত রয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) সকাল থেকে শুরু হওয়া এ হামলায় অন্তত ৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, যার মধ্যে রয়েছে কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা, এএফপি এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন।
গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ১৬টি মরদেহ, উত্তর গাজার আল-শিফা হাসপাতালে ১৬টি এবং দেইর এল-বালাহ’র আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে ৫টি মরদেহ পৌঁছায়। খান ইউনিসের একটি হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রাফাহ শহরের পশ্চিম ও উত্তরাংশে অবস্থিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গোলাবর্ষণে আরও সাতজন নিহত হয়েছেন।
একইদিন গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি পৃথক হামলায় ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি।
মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংগঠন ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) শুক্রবার জানায়, নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় সব ধরনের ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত রাখছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস দাবি করেছে, বিতর্কিত এই সংগঠনের বিতরণকৃত ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এ পর্যন্ত ১১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জিএইচএফ-এর পরিচালনা এবং অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ভূমিকা থাকায় ফিলিস্তিনি জনগণের মাঝে এ সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈদে নতুন জামা নয়, রুটির জন্য প্রার্থনা গাজার শিশুদের
বৃহস্পতিবার গাজার আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় আহত এক সাংবাদিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধপর্বে গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৬ জনে। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে এবং ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণকে গণমাধ্যম স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা বর্তমানে চরম বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে। খান ইউনিসের একমাত্র সরকারি হাসপাতালটিও অকার্যকর হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।
গাজায় চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ঘোষণা করেছেন, তার দেশ ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও স্বীকৃতি দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা তিনি উল্লেখ করেননি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৭৭ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন কয়েক লাখ, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজা উপত্যকার প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষ।
ঈদুল আজহার দিন যেখানে মুসলিম বিশ্বে আনন্দ-উৎসবের দিন হওয়ার কথা, সেখানে গাজায় সেই দিনটি পরিণত হয়েছে বেদনা আর শোকের প্রতীকে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি