ঈদের আগে রেমিট্যান্সের জোয়ার

ঈদুল আজহা সামনে রেখে আবারও রেমিট্যান্স প্রবাহে বড়সড় ইতিবাচক ধাক্কা পেয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জুন মাসের প্রথম তিন দিনে — অর্থাৎ ১ জুন থেকে ৩ জুন ২০২৫ পর্যন্ত — প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৬০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমান বাজারদরে প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসেবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, ১ জুন দেশে এসেছে ২১ কোটি ১৫ লাখ ডলার, ২ জুন এসেছে ১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার, এবং ৩ জুন এসেছে ১৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদুল আজহা সামনে রেখে কোরবানির পশু কেনাসহ পারিবারিক নানা খরচের জন্য প্রবাসীরা স্বজনদের কাছে বেশি অর্থ পাঠিয়ে থাকেন। ফলে রমজান ও কোরবানির ঈদকে ঘিরে প্রতিবছরই রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লম্ফন দেখা যায়।

২০২৫ সালের মে মাসজুড়ে দেশে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স — দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাসিক প্রবাসী আয়। টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৬ হাজার ৫৩১ কোটি। এর আগের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল চলতি বছরের মার্চ মাসে (৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার), যা মূলত ঈদুল ফিতরের আগে পাঠানো হয়। 

আরও পড়ুন: ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে দেশের অর্থনীতি স্থবির হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্সে এই প্রবাহ স্বাভাবিক। তবে আমরা খুশি যে হুন্ডির বদলে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার বাড়ছে। ডিজিটাল ট্রান্সফারের সুবিধা ও সরকারি প্রণোদনার কারণে প্রবাসীরা এখন অনেক বেশি স্বচ্ছ ও নিরাপদ পদ্ধতিতে টাকা পাঠাচ্ছেন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকে ৩ জুন ২০২৫ পর্যন্ত দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৮১১ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের এই সময়ে প্রবাসী আয় ছিল ২ হাজার ১৬৬ কোটি ডলার।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় অবদান রাখছে। পাশাপাশি ঈদের আগে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এই অর্থের সরাসরি প্রভাব পড়ছে, যা বাজার চাঙ্গা করতে সহায়ক হচ্ছে।

বর্তমানে প্রবাসী আয়ের ওপর সরকারের ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা রয়েছে, যা রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। এছাড়াও ডিজিটাল রেমিট্যান্স অ্যাপ ও মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা সহজ হওয়ায় অধিক সংখ্যক প্রবাসী এখন সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বেশ কিছু সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়েছে, যার সুফল এখন অর্থনীতিতে দৃশ্যমান।