News Bangladesh

স্পোর্টস ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১০ জুন ২০২৫

লড়েছে বাংলাদেশ, জিতেছে সিঙ্গাপুর

লড়েছে বাংলাদেশ, জিতেছে সিঙ্গাপুর

ছবি: সংগৃহীত

লাল-সবুজ পতাকার ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি। আশা ছিল জয়, ন্যূনতম এক পয়েন্ট হলেও। কিন্তু শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠল হারের হতাশা। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ‘সি’ গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে হার মানলো সিঙ্গাপুরের কাছে।

শুধু পরাজয় নয়, এই ম্যাচে ছিল নাটকীয়তা, প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা, সমর্থকদের ক্ষোভ আর এক বিতর্কিত রেফারিং সিদ্ধান্ত। এক কথায়, একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক ম্যাচের সব উপাদানই উপস্থিত ছিল ঢাকার হোম গ্রাউন্ডে।

প্রথমার্ধে বল দখলের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও গোলের সুযোগ কাজে লাগায় সিঙ্গাপুর। ৪৫ মিনিটে গোলকিপার মিতুল মারমার ভুল ক্লিয়ারেন্সে সুযোগ তৈরি করেন হ্যারিস হারুন। তার ক্রসে সাইড ভলিতে বল জালে পাঠান সং উই ইয়াং।

দ্বিতীয়ার্ধে বদলি খেলোয়াড় শাহরিয়ার ইমন মাঠে নামেন। কিন্তু ম্যাচের ৫৮ মিনিটে বাংলাদেশ ফের গোল হজম করে। হামিন শায়িনের দূরপাল্লার শট মিতুল ঠেকাতে পারলেও বল গিয়ে পড়ে ইখসান ফান্দির পায়ে, যিনি ফাঁক গলে লক্ষ্যভেদে সফল হন।

৬৭ মিনিটে রাকিব হোসেন বক্সের কাছ থেকে একটি নিখুঁত প্লেসিংয়ে ব্যবধান কমান। গোল আসে হামজা চৌধুরীর চোখধাঁধানো থ্রুপাস থেকে।

বাংলাদেশ আক্রমণে ছিল ধারাবাহিক। শমিত সোম, রাকিব, হামজারা একাধিকবার প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করেছেন। শেষ বাঁশির আগে শাহরিয়ার ইমন, তারিক কাজীর হেড ও রাকিবের প্লেসিং লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে নিশ্চিত সমতা হাতছাড়া হয়।

তবে ম্যাচের সবচেয়ে বিতর্কিত মুহূর্ত আসে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে। বক্সের মধ্যে বাংলাদেশের ফয়সাল ফাহিমকে ফাউল করা হয়। ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছিল এটি পরিষ্কার পেনাল্টি। তবে ফিলিপাইনের রেফারি ক্লিফোর্ড পসটানেস কোনো কর্ণপাত না করে খেলা চালিয়ে দেন। গ্যালারিতে থাকা দর্শক, অনলাইন সমর্থক—সবাই এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

পরিসংখ্যানেই প্রমাণ: ভালো খেলেও হারের যন্ত্রণা

  • দখলে বাংলাদেশ: বল পজেশনে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ (প্রায় ৫৬%)
  • শট অন টার্গেট: বাংলাদেশ – ৬, সিঙ্গাপুর – ৪
  • কর্নার: বাংলাদেশ – ৮, সিঙ্গাপুর – ৩
  • ফাউল: বাংলাদেশ – ১১, সিঙ্গাপুর – ১৫

আরও পড়ুন: জাতীয় স্টেডিয়ামে উৎসবের ঢল, সিঙ্গাপুর বধের আশায় বাংলাদেশ

চোখে পড়ার মতো পারফরম্যান্স দেন হামজা চৌধুরী, যিনি মাঠে ছিলেন দুর্দান্ত প্রেস ও থ্রুপাসে। শমিত সোম, রাকিব হোসেন এবং বদলি হিসেবে নামা আল আমিনও সক্রিয় ছিলেন সিঙ্গাপুরের রক্ষণ ভেদে।

ম্যাচপূর্ব অনুষ্ঠানে গান গেয়ে মাতান জেফার ও মোজা। বিরতির সময় স্টেডিয়ামে লেজার শো ও মোবাইলের আলোয় তৈরি হয় এক মোহময় পরিবেশ। কিন্তু এই সৌন্দর্যের ছায়া পড়েনি ফলাফলে।

এই হারের পর বাংলাদেশের পয়েন্ট ১। একই গ্রুপে ভারত হংকংয়ের কাছে হেরে তলানিতে। ২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে সিঙ্গাপুর।

বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বলেন, “আমরা ম্যাচটা জিততেই পারতাম। খেলোয়াড়রা সেরাটা দিয়েছে। তবে ম্যাচের শেষ দিকে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষে গিয়েছিল। ফুটবলে এমনটা হয়, কিন্তু তা মেনে নেওয়া কঠিন।”

মাঠে খেলোয়াড়দের নিবেদন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশ খেলেছে গর্ব করার মতো ফুটবল। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচে সিদ্ধান্তের সামান্য বিচ্যুতি অনেক সময় দলভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। এই ম্যাচে সেটিই যেন ঘটল।

সিঙ্গাপুর হয়তো জয় পেয়েছে, তবে লড়াকু মনোভাব, মাঠে গতি এবং দর্শকদের উচ্ছ্বাস—সব দিক দিয়ে জিতে গেছে বাংলাদেশ। হয়তো পয়েন্ট নয়, কিন্তু ভবিষ্যতের সাহস যোগানো এক আত্মবিশ্বাস পেয়েছে লাল-সবুজ।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়