বিসিবিতে পালাবদল: ফারুকের বিদায়, আসছেন বুলবুল

ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) শীর্ষ পদে নাটকীয় পরিবর্তনের সম্ভাবনা এখন বাস্তবতা হয়ে উঠছে। গত বছরের রাজনৈতিক রদবদলের জেরে নির্বাচিত হয়েছিলেন ফারুক আহমেদ, এবার একইরকম একটি প্রশাসনিক সংকটে তাকেই বিদায় নিতে হলো।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (জেকেপি) বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাতে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তার কাউন্সিলর মনোনয়ন বাতিল করেছে, যার মধ্য দিয়ে কার্যত বিসিবি সভাপতির পদ থেকেও তাকে অপসারিত করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই রদবদলের মূলে রয়েছে বোর্ড পরিচালকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ, যার প্রমাণ আট পরিচালকের লিখিত অনাস্থা। পাশাপাশি, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদনও জেকেপির এই সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ফারুক আহমেদ ছিলেন জেকেপি মনোনীত পরিচালক। সেই পরিচয়ের ভিত্তিতেই তিনি বোর্ডে পরিচালক নির্বাচিত হন এবং পরে সভাপতি পদে আসীন হন। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কাউন্সিলর না হলে কেউ পরিচালক হতে পারেন না এবং পরিচালক না হলে কেউ সভাপতি থাকতে পারেন না। ফলে কাউন্সিলর মনোনয়ন বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে তার সভাপতির আসনও পড়ে গেছে গভীর অনিশ্চয়তায়।
অথচ মাত্র মাসকয়েক আগে তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, আমি নির্বাচিত সভাপতি, পদত্যাগ করব না। তবে বাস্তবতা বদলে গেছে দ্রুত। এমনকি তিনি ৩১ মে’র বোর্ড সভাও বাতিল করে দেন, কিন্তু সে সিদ্ধান্তও টিকলো না। কারণ, এখন সেই সভায় সভাপতিত্বের যোগ্যতাও আর তার নেই।
এই পরিবর্তনের উত্তাপে যে নামটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, তিনি হলেন সাবেক জাতীয় অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ইতোমধ্যে তাকে নতুন কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে, যা বিসিবিতে তার পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার পথ তৈরি করে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: নেতৃত্ব বদলের পথে বিসিবি: প্রস্তুত আমিনুল
বুলবুল বর্তমানে আইসিসির ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে যুক্ত থাকলেও দেশের প্রয়োজনে দায়িত্ব নিতে ইতিবাচক অবস্থানে আছেন বলে জানিয়েছেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশের হয়ে কাজ করার সুযোগ আসলে আমি তা নিতে প্রস্তুত।
বিশ্বক্রিকেটে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেই ঐতিহাসিক সেঞ্চুরিয়ান এখন বিসিবির শীর্ষপদে বসতে চলেছেন কিনা—এমন প্রশ্ন এখন সময়ের। বোর্ডের বিশেষ সভা শিগগিরই বসছে, এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলর হিসেবে তার পরিচয় অনুমোদিত হলে পরিচালকের পদও তার হবে। এরপর বোর্ড সভায় তাকে সভাপতির দায়িত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত করাও শুধু সময়ের ব্যাপার।
গত ৫ আগস্টের গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিসিবির নেতৃত্বে যে শূন্যতা তৈরি হয়, সেখানে ফারুক আহমেদের উত্থান অনেকটা প্রশাসনিক স্বস্তি দিয়েছিল। তবে সময়ের ব্যবধানে সেই আস্থার জায়গা রূপ নেয় বিতর্কে—নেতৃত্ব সংকট, অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং পরিচালনা ব্যর্থতার অভিযোগে। তার ওপর বিসিবির মাঠের ব্যর্থতাও কড়া সমালোচনার জন্ম দেয়।
অবশেষে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কঠোর অবস্থান নেয় এবং একজন নতুন নেতৃত্ব খুঁজে নেয়, যে কিনা জাতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গঠনে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারেন। সেই আস্থার কেন্দ্রেই রয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
বিসিবির বর্তমান কমিটির মেয়াদ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, এরপর অক্টোবর মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে এর আগেই নেতৃত্বে এই রদবদল আগামী নির্বাচনের জন্যও দিকনির্দেশক হয়ে উঠতে পারে।
বিসিবিতে নেতৃত্ব বদলের এই অনিশ্চয়তার সময় প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশ ক্রিকেট শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও ‘নেভার আ ডাল মোমেন্ট’। এখন দেখার বিষয়, এই পরিবর্তন ক্রিকেটের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়, নাকি আরো কোনো নাটকীয় মোড় অপেক্ষা করছে সামনে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি