যদি প্রয়োজন হয়, আমরা ক্ষমা চাইবো: ওবায়দুল কাদের

ফাইল ছবি
প্রাক্তন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দল হিসেবে কোনো ভুল হয়ে থাকলে সেটির জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি দেশের ভেতরে থেকেই হতে হবে। দেশের বাইরে থেকে ক্ষমা চাওয়ার কোনো অর্থ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কলকাতা থেকে কথা বলার সময় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সহিংসতা ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান এবং শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে দেশ ত্যাগ করেন।
আত্মগোপনের দিনগুলো
জুলাইয়ের গণ-আন্দোলনের পর প্রায় তিন মাস আত্মগোপনে ছিলেন বলে দাবি করেন কাদের।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবন ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী একটি প্রাইভেট বাড়িতে। আন্দোলনকারীরা সেই বাড়িতেও হামলা করে এবং তিনি স্ত্রীসহ বাথরুমে আশ্রয় নেন। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা বাথরুমেও ঢুকে পড়ে, তবে পরে তাদেরই একটি অংশ কাদের দম্পতিকে রক্ষা করে জনতার হাত থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
কাদের বলেন, আমি একটু অনন্যোপায় হয়ে বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানেই অনেকক্ষণ থাকতে হয়। একসময় যারা হামলা করেছিল তাদেরই একটা দল আমাকে চেহারা ঢেকে বাইরে বের করে আনে এবং জনতার চোখ এড়িয়ে নিরাপদে সরিয়ে দেয়।
সেনানিবাস ও পালানোর গুঞ্জন
পাঁচ আগস্টের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দেশত্যাগ এবং সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়ার নানা খবর সামনে আসে। সেনাবাহিনীর প্রকাশিত তালিকায় ৬২৬ জনের নাম থাকলেও ওবায়দুল কাদেরের নাম সেখানে ছিল না।
তিনি দাবি করেন, কোনো ক্যান্টনমেন্টে তিনি আশ্রয় নেননি এবং তখন তার ধারণাতেই ছিল না যে সেখানেও আশ্রয় নেওয়া যায়।
আরও পড়ুন: ৫ আগস্ট বাথরুমে পাঁচ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম: ওবায়দুল কাদের
তিনি বলেন, আমি প্রাইভেট বাড়িতেই ছিলাম। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বারবার বাসা বদল করেছি। ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেওয়ার চিন্তা তখন আমার মাথায় ছিল না।
পতনের পূর্বাভাস ও দলীয় কৌশল
প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভেতর আলোচনার মাধ্যমে সরকার পতনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল বলে জানান কাদের। তবে পাঁচ আগস্টের সহিংস বিস্ফোরণ এবং ক্ষমতা হস্তান্তর যেভাবে সংঘটিত হয়, তা ছিল অত্যন্ত ‘অর্গানাইজড’ এবং ‘অপ্রত্যাশিত’। ইন্টেলিজেন্স সংস্থাগুলো সময়মতো বাস্তব পরিস্থিতি সঠিকভাবে উপলব্ধি করাতে পারেনি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্দোলন দমন করতে চাইলেও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকেও মাঠে সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছিল। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মূল ভূমিকা পালন করেছিল বলে দাবি করেন কাদের।
ক্ষমা ও অনুশোচনার প্রশ্ন
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সংঘর্ষ ও সহিংসতায় অন্তত ১৪০০ মানুষ নিহত হয়।
এই সহিংসতার দায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমা চাইবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমা চাওয়ার বিষয় দেশের মাটিতে। দেশের বাইরে থেকে আমরা ক্ষমাটা চাইবো কেমন করে?
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে চর্চা আছে, বিশ্লেষণ চলছে। যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে আমরা কখনো পিছিয়ে থাকব না। তবে সেটা অবশ্যই দেশের মাটিতেই হবে, যখন আমরা দেশে ফিরে রাজনীতি করতে পারব।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও অবস্থান
আওয়ামী লীগ বর্তমানে কার্যত নিষিদ্ধ একটি দল। যদিও দলটির অনেক নেতাই বলছেন, তারা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাদের কথায় স্পষ্ট, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখেই নিজেদের অবস্থানকে শক্ত করতে চান তারা।
কাদেরও বলেছেন, সব কিছুরই সূত্র হলো দেশ। দেশের মাটিতে বসেই আমাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন ঘটবে। তখনই যদি অনুশোচনা বা ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তা আমরা করব।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি