ড. ইউনূসকে ৪৩ অস্ট্রেলীয় এমপি-সেনেটরের জরুরি চিঠি

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশ্যে একটি জরুরি চিঠি পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের ৪৩ জন সিনেটর ও সংসদ সদস্য।
চিঠিতে তারা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন: (১) জরুরি ভিত্তিতে একটি স্পষ্ট ও সময়সীমাসম্পন্ন নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা, (২) ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং (৩) র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভেঙে ফেলা।
চিঠিটি বুধবার (২১ মে) ই-মেইলের মাধ্যমে ড. ইউনূসের দপ্তরে পাঠানো হয়।
এতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক রূপান্তরের ভূয়সী প্রশংসা করা হয় এবং এই রূপান্তরকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি ‘‘ঐতিহাসিক সুযোগ’’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ান সিনেটর ও এমপিদের মতে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে একটি নির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ নির্বাচনি পরিকল্পনা ঘোষণার কোনো বিকল্প নেই।
তারা বলেন, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়নি। তাই সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন জরুরি।
চিঠিতে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ সাহসিকতা ও সংকল্পের সঙ্গে রাস্তায় নেমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক দিয়েছিল। তবে এ বিজয়ের পেছনে রয়েছে বড় ধরনের মানবিক মূল্য। এখন প্রয়োজন সত্য, ন্যায়বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ।
আরও পড়ুন: রাখাইন ইস্যুতে করিডোর নয়, ত্রাণ চ্যানেল: নিরাপত্তা উপদেষ্টা
এছাড়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রসঙ্গে চিঠিতে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে র্যাবের হাতে ২,৬৯৯ জনের বেশি মানুষ বেআইনিভাবে নিহত হয়েছেন। বাহিনীটি বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ নানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
চিঠিতে অস্ট্রেলিয়ান সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও র্যাব ভেঙে ফেলার এবং এর শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
চিঠিতে ড. ইউনূসের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলা হয়, আপনার প্রশাসনকে এখনই জনগণের আস্থা পুনর্গঠনের জন্য কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য পদক্ষেপ নিতে হবে। বিলম্ব বা অস্পষ্টতা দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে বিশ্বাস সংকট তৈরি করতে পারে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী অস্ট্রেলিয়ান সিনেটর ও এমপিদের মধ্যে রয়েছেন সিনেটর লারিসা ওয়াটার্স, ডেভিড শোব্রিজ, জর্ডন স্টিল-জন, ফাতিমা পেম্যান, লিডিয়া থর্প, পেনি অলম্যান-পেইন, মেহরিন ফারুকি, স্টেফ হজগিন্স-মে, বারবারা পোকক, পিটার হুইশ-উইলসন, ডোরিন্ডা কক্স, নিক ম্যাককিম, সারা হ্যানসন-ইয়ং, এলিজাবেথ ওয়াটসন-ব্রাউন এমপি, অ্যাবিগেল বয়েড, আমান্ডা কোহন, ক্যাথরিন কোপসি, সু হিগিনসন, কেট ফেহরম্যান, আনাসিনা গ্রে-বারবেরিও, আইভ পুগলিয়েলি, ড. সারাহ ম্যানসফিল্ড, ব্র্যাড পেটিট, জেনি লিওং, তামারা স্মিথ, কোবি শেট্টি, টিম রিড, এলেন স্যান্ডেল, মাইকেল বার্কম্যান, গ্যাব্রিয়েল ডি ভিয়েট্রি, ড. রোজালি উডরাফ, তাবাথা ব্যাজার, সিসিলি রোজল, ক্যাসি ও’কনর, ভিকা বেইলি, হেলেন বার্নেট, শেন র্যাটেনবারি, অ্যান্ড্রু ব্র্যাডক, জো ক্লে, লরা নাটাল, রবার্ট সিমস ও ড. মাইক ফ্রিল্যান্ডার।
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই চিঠি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই পর্যবেক্ষণ ও চাপ অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি