মেঘনায় জমি নিয়ে সালিশে একজনকে পিটিয়ে হত্যা

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার তুলাতুলি শিবনগর গ্রামে জমি নিয়ে সালিশে মধ্যেই গোলাম মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। নিহতের সন্তানরা সবাই প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে দুই শারীরিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।
বৃহস্পতিবার দুপুরের এ ঘটনাও এখনও মামলা দায়ের সম্পন্ন হয়নি। শনিবার দুপুর ২টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় মামলার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে ছিল।
মামলায় এক নম্বর আসামি হচ্ছেন মুজিবসেনা ঐক্যলীগ নামে একটি অননুমোদিত সংঘঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। যিনি ২০ বছর আগে জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।
জানা যায়, মহিউদ্দিনসহ তার আপন ভাই ও চাচাতো ভাইদের সঙ্গে একই বাড়ির লুৎফর ও শাহ আলমসহ আরো কয়েকজনের বাড়ির পাশে আমবাগানের জায়গার বিরোধ মীমাংসার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের উপস্থিতিতে মাপজোখ চলছিল। বিষয়টি এক বছর আগেই সালিশের মাধ্যমে মীমাংসার পর্যায়ে চলে আসে। ঘটনার দিন শুধু সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছিল। হঠাৎ লুৎফর মহিউদ্দিনের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে শাহ আলম হুকুম দিয়ে লুৎফর ও তার তিন ভাই, ভাতিজাসহ প্রায় ২০/২৫ জন চেয়ার, লাঠি রড দিয়ে মারধর শুরু করেন। এসময় কয়েকজনের হাতে হাঁসুয়াও দেখা গেছে। এসব অস্ত্র তারা রাস্তার ওপর রাখা লুৎফরের জিপ গাড়ি থেকে বের করে আনেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মহিউদ্দিনকে মাটিতে ফেলে কয়েকজনে মিলে বুকে উপর্যুপরি ঘুষি লাথি ও ঘাড়ে শক্ত লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এসময় মাথায়ও আঘাত পড়ে। মারপিটের একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে হামলাকারীরা স্পিডবোট নিয়ে পালিয়ে যায়। গাড়িটি নিয়ে ড্রাইভার ইসরাফিল আলী পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
এ ঘটনায় মহিউদ্দিন (৬০), তার বড়ভাই শাহাবুদ্দিন ডাক্তারের ছেলে সোহেল (৩৫), খসরু (৪৫) মুক্তাদির (৩৮), গিয়াস উদ্দিনের ছেলে এনামুল হক রনি (২১), মহিউদ্দিনের স্ত্রী মাফিয়া বেগম রক্তাক্ত আহত হয়েছেন। এর মধ্যে রনি ব্রেনে গুরুতর গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার মাথার সিটি স্ক্যান করাতে হবে।
আহতদের বেলা ২টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাজমুল আলম শিশির মহিউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন, মহিউদ্দিনকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই তিনি মারা গেছেন।
এ ঘটনায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল করিম, মেঘনা থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মজিদ ঘটনা পরিদর্শন করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল ও হামলাকারীদের ঘর থেকে রক্তমাখা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র জব্দ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই জন নারীকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর এলাকার বিভিন্ন লোক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ঘটনার প্রায় ১৫ দিন আগে রাত ৯টার দিকে লুৎফর ও একই গ্রামের প্রাইমারি শিক্ষক দেলোয়ারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একদম পেছনের দিয়ে দাড়িয়ে ১০/১২ জন লোক নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। ১০/১২ দিন আগে তুলাতলি ব্রিজে পাঁচ/ছয় জন লোক দাড়িয়ে দেলোয়ার অস্ত্র মজুদ রাখার কথা বলতেও শুনেছেন পথচারীরা। দেলোয়ার বলেছেন, “১২ তারিখ (নভেম্বর) মারামারি হবে। অস্ত্রশস্ত্র মজুদ রাখিস।”
হত্যাকাণ্ডের পর লুৎফর পালিয়ে যাওয়ার সময় দেলোয়ারকেও পালাতে বলেছিলেন। তখন দেলোয়ার বলেন, “আমি যাব না। এখানে দেখার কিছু বিষয় আছে।”
তবে দেলোয়ার সরাসরি হামলায় অংশ নেননি বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।
এদিকে হামলাকারীরা কৌশলে তাদের ঘর থেকে মালপত্র সরিয়ে লুটের মামলা করবে এরকম গুঞ্জন শুনে এখন উল্টো মামলা আতঙ্কে ভুগছেন হামলার শিকার লোকজন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ