News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:১৯, ২৫ অক্টোবর ২০২০
আপডেট: ০৩:৫০, ২৫ অক্টোবর ২০২০

মণিরামপুরে বয়স্ক ভাতার কার্ড নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ

মণিরামপুরে বয়স্ক ভাতার কার্ড নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ

যশোরের মনিরামপুরে বয়স্ক ভাতার কার্ড নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত বয়স্ক ও দরিদ্রদের এ ভাতার কার্ড না দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ধনী ও মধ্যবিত্তদের বয়স্ক ভাতার কার্ড প্রদান করছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে এলাকার একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে। এ অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলার খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হকের বিরুদ্ধে।

তবে টাকা নিয়ে মধ্যবিত্ত ধনীদের কার্ড দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান।

খেদাপাড়া ইউনিয়নের মাহমুদকাঠী গ্রামের ৬৭ বছর বয়সী রাবেয়া জানান, স্বামী মারা গেছে প্রায় ১০ বছর হলো। অন্যের দুয়ারে ঘুরে পেট চলে বৃদ্ধার। স্বামীর মৃত্যুর পর বাঁচার তাগিদে তিনি নেমে পড়েন ভিক্ষাবৃত্তিতে। ১০ বছর ধরে ভিক্ষা করলেও খবর রাখেন না কেউ। এখনো পর্যন্ত বারবার ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে ঘুরেও একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড জোগাড় করতে পারেননি। দুই ছেলে হতদরিদ্র হওয়ায় তারাও মায়ের খবর রাখেন না। স্বামীর ভিটে না থাকায় এখন নাতির আশ্রয়ে থাকেন তিনি।

রাবেয়া বেগম বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে সকাল-বিকেল অন্যের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দুমুঠো খাবার জোটে। দুই ছেলে ভ্যান চালায়। তাদেরই সংসার চালাতে কষ্ট হয়। আমাকে দেখবে কী করে, স্বামীর ভিটে মাটি নেই। নাতছেলে ইমরানের ঘরে কোনো রকমে থাকি।”
রাবেয়া বেগম আরো বলেন, “আগে রাস্তার কাজ করতাম। বয়স হওয়ায় কয়েক বছর ধরে মেম্বার বাদ দেছে। একখান কার্ডের জন্যি মেম্বার মিলনের পিছে কত ঘুরিছি। মেম্বার কয়, আমার নাকি কার্ড হবে না। এখন বয়স হয়েছে। এর-ওর দুয়ারে গেলি দুটো ভাত জোটে। অসুখ হলি-ওষুধ জোটে না। শুনিছি টাকা দিলি কার্ড হয়। আমি টাকা পাব কনে?”

রাবেয়া বেগমের মতো একই ওয়ার্ডের কদমবাড়িয়া গ্রামের আরেক হতভাগ্য বিধবা সুফিয়া বেগম (৫৭)। দেড় বছর আগে দিনমজুর স্বামী আব্দুস সাত্তার মারা যাওয়ার পর পেটের তাগিদে তিনিও ভিক্ষায় নেমে পড়েন। সুফিয়া বেগম আলসারের রোগী। অসুস্থতার কারণে এখন অন্যের দুয়ারে ঘোরা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই বিধবাও সরকারি সব সহায়তাবঞ্চিত।

সুফিয়া বেগম বলেন, “দেড় বছর আগে অসুখ হয়ে স্বামী মরেছে। কিছু রেখে যেতে পারিনি। এর-ওর দুয়ারে ঘুরে কোনোরকম পেট চলে। আমি পেট ব্যথার রোগী। এখন ঠিকমতো বেরতে পারিনে। ১৫ বছরের একটা ছেলে আছে। ও কাজ করে নিজে চলে। আমারে দেখে না। মেম্বার মিলনের কাছে অনেকবার গেছি। ‘পরে হবে’ বলে বারবার ফেরত দেছে।”

খেদাপাড়া ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার তায়জেল ইসলাম মিলন বলেন, “ওই দুই নারীর ভাতার কার্ড পাওয়ার জন্য চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করা হয়েছে। পরবর্তীতে কার্ডের তালিকা আসলে তারা বয়স্ক ভাতার কার্ড পাবেন।”

মনিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হকের কাছে বিধবা ও বয়স্ক ভাতার কার্ডের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যারা আগে আবেদন করেছেন তাদের আগে কার্ড দেয়া হয়েছে। সবাইকে তো একসাথে কার্ড দেয়া যাবে না। বয়স্ক ভাতার কার্ড অপ্রতুল থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া যারা বেশি দরিদ্র তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্ড দেয়া হয়েছে।”

বয়স্ক ভাতার কার্ড নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়