জাতীয় স্টেডিয়ামে উৎসবের ঢল, সিঙ্গাপুর বধের আশায় বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যেন সত্যিই ফিরে এসেছে বাংলাদেশের ফুটবলের হারিয়ে যাওয়া সোনালি অতীতের আভাস।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান বাছাইপর্বের হোম ম্যাচকে ঘিরে সোমবার বিকেল থেকে যে দৃশ্য রাজধানীর জাতীয় স্টেডিয়াম ও তার আশপাশে গড়ে উঠেছে, তা শুধু একটি খেলাকে কেন্দ্র করে জনসমাগম নয়—এ যেন এক যুগপৎ সাংস্কৃতিক ও আবেগঘন আন্দোলনের রূপ নিয়েছে।
জুন মাসের চেনা তাপদাহে যখন ঢাকার পিচঢালা রাজপথ ধুলিধূসরিত, তখন হঠাৎ বিকেল ৪টার দিকে ঝমঝমিয়ে নামা বৃষ্টি যেন ম্যাচের উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করে। এই বৃষ্টিকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখেছেন অনেক ফুটবলপ্রেমী। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব গ্যালারিতে বৃষ্টিতে ভিজেও থামেননি তারা; বরং ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে স্টেডিয়াম যেন কেঁপে ওঠে। দেশের ফুটবলে এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনেক বছর পর দেখা গেল।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) অনলাইনে ছেড়েছিল ১৮,৩০০টি টিকিট। প্রথম ঘণ্টার মধ্যেই সেগুলো বিক্রি হয়ে যায়। তবে বরাবরের মতো এবারও টিকিট বিতরণ ও প্রবেশ ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। গেট খোলার কথা ছিল দুপুর ২টায়, কিন্তু মাঠে প্রবেশ শুরু হয় তা–এর বেশ পরে। ফলে পল্টন মোড় থেকে স্টেডিয়ামের প্রতিটি প্রবেশপথে দেখা যায় বিশাল লাইন, যার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন ছিল।
পল্লবী থেকে আসা সমর্থক শাহেদ বলেন, ভুটানের ম্যাচে টিকিট থাকা সত্ত্বেও মাঠে ঢুকতে পারিনি। এবার আরও আগে চলে এসেছি—খালি গ্যালারি নয়, আমরা চাই গর্জে ওঠা গ্যালারি।
আরও পড়ুন: লক্ষ্য দর্শক নয়, জিততে হবে: জামাল
শুধু স্টেডিয়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি এই ম্যাচ। ঢাকার রবীন্দ্র সরোবর থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহের নির্ধারিত স্থানে বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করে তৈরি হয়েছে গণউৎসবের আবহ। সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের উদ্যোগে ঢাকার রূপনগর-পল্লবীর ১২টি মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে বিশাল স্ক্রিন। মুসলিম বাজার ঈদগাহ মাঠ, শহীদ আসিফ চত্বর কিংবা দোরেন মোড়—প্রত্যেকটি স্থানে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত একত্রিত হয়েছেন জামাল ভূঁইয়া, হামজা চৌধুরী ও শমিত হোসেনদের দেখতে।
গ্যালারির একদিকে দেখা যায় তরুণী দল হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন, কোটি মানুষের প্রাণের সুর, বাংলার ফুটবল ফিরে আসুক।
আরেক তরুণের হাতে দেখা গেল, হামজা-শমিত-ফাহমিদুলের ঠিকানা— পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।
এগুলো কেবল স্লোগান নয়—বহু বছরের হতাশা, আক্ষেপ ও প্রত্যাশার সৃষ্ট নান্দনিক প্রতিবেদন।
যদিও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তবুও খোলামেলা আলোচনা দরকার ম্যাচ ব্যবস্থাপনায়। বড় ম্যাচে দর্শকপ্রবেশ ও টিকিট বিতরণে ডিজিটাল রূপান্তরের যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তার প্রতিফলন পুরোপুরি দেখা যায়নি। খেলা শুরুর আগে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত গেট খোলা থাকলেও সময়মতো মাঠে ঢুকতে পারেননি অনেক দর্শক। ভবিষ্যতের জন্য এই অনিয়মগুলোর সমাধান প্রয়োজন, বিশেষত যদি এই ধরনের ম্যাচ ঘিরে এত জনস্রোত অব্যাহত থাকে।
জাতীয় স্টেডিয়ামের কংক্রিটের গ্যালারিতে আজ যেন শুধু ম্যাচ দেখা হয়নি; দেশের নাগরিকেরা আজ ফুটবলের মাধ্যমে নিজেদের আবেগ, ইতিহাস ও ঐক্যকে নতুন করে চেনার সুযোগ পেয়েছেন। এমন এক সন্ধ্যায় কেবল গোলের অপেক্ষা নয়—প্রত্যেক দর্শকের মনে ছিল ফিরে আসা গৌরবের আশ্বাস।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি