চার্লসের আমন্ত্রণে ইউনূসের লন্ডন যাত্রা

চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

সোমবার (৯ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা।

এই সফরে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে বাকিংহাম প্যালেসে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন ড. ইউনূস। সেখানে তার হাতে তুলে দেওয়া হবে ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’। 

বিশ্বজুড়ে শান্তি, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং মানবিক সহাবস্থানে অনন্য অবদান রাখায় তাকে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হচ্ছে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ জুন, ঐতিহ্যবাহী সেন্ট জেমস প্যালেসে।

এছাড়া ১১ জুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে ড. ইউনূসের একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাণিজ্য, অভিবাসন, জলবায়ু ও মানবাধিকারসহ দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। 

সফরসূচি অনুযায়ী, তিনি আরও সাক্ষাৎ করবেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, কমনওয়েলথ মহাসচিব, আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা (IMO)-র মহাসচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে।

বিশ্ববিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসেও বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপক ইউনূস। ১১ জুনের এই বক্তৃতায় তিনি বৈশ্বিক ন্যায়নীতি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন।

আরও পড়ুন: লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান টিউলিপ

সফরকে ঘিরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। ইতিমধ্যে নানা সংগঠন প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রবাসীরা এই সফরকে কেবল রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং প্রবাসী জনগণের প্রত্যাশা ও দাবির প্রকাশের একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার এটিই সঠিক সময়। তারা মনে করেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার ব্রিটেনের সঙ্গে কৌশলগত বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।

অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সফরকালীন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার একটি অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হতে পারে বলে একাধিক সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও সফরের সময় চেয়ে শেখ রেহানার কন্যা ও যুক্তরাজ্যের সাবেক সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। 

সূত্র মতে, তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কিছু অভিযোগ সম্পর্কেও আলোচনা করতে চান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফর শুধু একটি পুরস্কার গ্রহণ বা কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অবস্থান পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সফরের সময়সূচি এবং সংলাপের ধরণ এই সরকারের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক কৌশল সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে আগামী ১৪ জুন।