News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ৯ জুন ২০২৫
আপডেট: ১৯:০১, ৯ জুন ২০২৫

কোভিড হটস্পট ভারত, ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার বার্তা

কোভিড হটস্পট ভারত, ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার বার্তা

ফাইল ছবি

ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে উচ্চমাত্রার সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ওমিক্রন পরিবারের একাধিক সাব-ভ্যারিয়েন্ট— বিশেষ করে LF.7, XFG, JN.1 এবং NB.1.8.1—প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংক্রমণ বাড়িয়ে চলেছে। এর মধ্যে ভারতের কেরালা, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লি ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

রবিবার (৮ জুন) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশটিতে বর্তমানে কোভিড রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে এবং একদিনেই ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশেও নতুন করে ঢাকায় একজন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে, যা প্রায় দেড় বছরের মধ্যে প্রথম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য সংক্রামক দেশ থেকে আগত বা সেসব দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের ওপর বিশেষ নজরদারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরগুলোতে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি (IHR-2005) অনুযায়ী হেলথ স্ক্রিনিং ও সার্ভেইলেন্স বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে:

  • নন-টাচ পদ্ধতিতে তাপমাত্রা পরীক্ষা: থার্মাল স্ক্যানার ও ডিজিটাল হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে আগত যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে।
  • স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম সংরক্ষণ: সকল পয়েন্ট অব এন্ট্রিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই সুনিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
  • ভ্রমণ সতর্কতা: জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশগুলোতে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: করোনার আশঙ্কায় মেট্রোরেলে মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান

করোনার নতুন প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাধারণ নাগরিকদের জন্য কিছু নির্দেশনা জারি করেছে:

  • বারবার সাবান দিয়ে (অন্তত ২০-২৩ সেকেন্ড) হাত ধুতে হবে।
  • নাক ও মুখ ঢাকতে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
  • আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
  • অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ না করার পরামর্শ।
  • হাঁচি-কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা উচিত।

যদি কেউ কোভিড উপসর্গে ভোগে, তবে তাকে ঘরে থাকার এবং গুরুতর অসুস্থ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আইইডিসিআরের হটলাইন (০১৪০১-১৯৬২৯৩) এ যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

২০১৯ সালের শেষ প্রান্তে চীনে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের পর বাংলাদেশে এটি ছড়িয়ে পড়ে ২০২০ সালের মার্চে। গত পাঁচ বছরে ২০ লাখের বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন ২৯ হাজার ৫০০ জন।

২০২১ সালে ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ বছর—মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়ায়। তবে ২০২৪ সালজুড়ে দেশে কোভিডে কারও মৃত্যু হয়নি। ২০২৩ সালে ৩৭ জন এবং ২০২২ সালে ১৩৬৮ জন মারা যান। এ বছর এখন পর্যন্ত এই একটি মৃত্যুই রেকর্ডে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন ধরন NB.1.8.1 অমিক্রন জেএন-১ এর একটি বিবর্তিত রূপ, যা আরও বেশি সংক্রামক হলেও এখনও পর্যন্ত প্রাণঘাতী নয় বলে ধরা হচ্ছে। তবে ঝুঁকি থেকে যায়, বিশেষত বয়স্ক ও রোগপ্রবণদের জন্য।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করিয়ে দিয়েছে, বর্তমানে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার সময়। নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে, জনসমাগমস্থলে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং সামান্য উপসর্গ থাকলেও ঘরে থাকতে।

সরকার ইতোমধ্যেই সব জেলাপর্যায়ে হেলথ ডেস্কগুলোতে সংক্রমণ প্রতিরোধ কার্যক্রম মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, যাতে হঠাৎ করে সংক্রমণ বাড়লেও দ্রুত সাড়া দেওয়া যায়।

পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর বাংলাদেশ নতুনভাবে কোভিড মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে অতীতের মতো চরম বিধিনিষেধে না গিয়ে, সচেতনতা ও প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারির দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জনসাধারণের দায়িত্বও তাই আগের চেয়ে বেশি—স্বাস্থ্যবিধি মানলে করোনার নতুন ঢেউকে অনেকটাই রুখে দেওয়া সম্ভব।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়