News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:১৬, ২৮ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ১৫:০০, ২১ জুন ২০২০

শেরপুরে ৪৫ ফুট উঁচু মা মারিয়ার মূর্তি

শেরপুরে ৪৫ ফুট উঁচু মা মারিয়ার মূর্তি

শেরপুর: শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা বারমারী সাধু লিওর খ্রিস্টান ধর্মপল্লিতে স্থাপন করা হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ফাতেমা রাণীর ধর্মীয় তীর্থস্থান। ধর্মীয় চেতনায় প্রতিবছর শান্তিপূর্ণভাবে তীর্থযাত্রা সুসম্পন্ন করায় প্রতি বছর এই তীর্থস্থানে দেশি-বিদেশি তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

এই তীর্থস্থানটিকে আন্তর্জাতিক তীর্থস্থানে রূপান্তরিত করতে এ বছর স্থাপন করা হয়েছে ৪৫ ফুট উঁচু মা মারিয়ার মূর্তি। এছাড়া যিশুখ্রিস্টের দুটি বড় ভস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে এখানে।

বারমারী খ্রিস্টধর্মপল্লি সূত্রে জানা গেছে, ক্যাথলিক খ্রিস্টভক্তদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ও অনুকরণে পাহাড় ঘেরা মনোরম পরিবেশে এ তীর্থস্থানটি স্থাপন করা হয়। ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের তৎকালীন প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ বারমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লিতে ফাতেমা রাণীর তীর্থ স্থান হিসেবে ঘোষণা করেন। এ তীর্থস্থানের ২ কিমি পাহাড়ি টিলায় ক্রুশের পথ ও পাহাড়ের গুহায় স্থাপন করা হয়েছে মা-মারিয়ার মূর্তি। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিন ব্যাপী বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হয়। এ সময় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার খ্রিস্টভক্তরা অংশ গ্রহণ করে থাকেন। তীর্থ উৎসবে মহাখ্রিস্টযোগ, গীতি আলেখ্য, আলোর মিছিল, নিশিজাগরণ, নিরাময় অনুষ্ঠান, পাপ স্বীকার, জীবন্ত ক্রুশেরপথসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ দিন খ্রিস্টভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ গ্রহণ করে প্রায় ২ কিমি পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মা-মারিয়ার মুর্তির সামনের বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে নির্মল হৃদয়ের অধিকারিনী, ঈশ্বর জননী, খ্রিস্টভক্তের রাণী, স্নেহময়ী মাতা ফাতেমা রাণীর কর কমলে ভক্তি শ্রদ্ধা জানায় ও তার অকৃপণ সাহায্য প্রার্থনা করে থাকে।

খ্রিস্টধর্মপল্লির সভাপতি মি. লুইস নেংমিনজা, সাধারণ সম্পাদক মি. প্রদীপ জেংচাম বলেন, ধর্মীয় চেতনায় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হওয়ায় বর্তমানে এটি মহাতীর্থস্থানের রূপ পেতে যাচ্ছে। প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন মূল সুরের উপর ভিত্তি করে বাৎসরিক তীর্থ উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

তিনি আরও জানান, ভক্তদের আগমন বাড়ায় বর্তমানে এই তীর্থস্থানে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৫ ফুট উচ্চতার ফাতেমা রাণীর মা মারিয়ার মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য ১৭তম বার্ষিক তীর্থ উৎসবে আগত তীর্থ যাত্রীরা এই ফাতেমা রাণীর পদতলে ভক্তি শ্রদ্ধা জানাতেন পারবেন।

এ ব্যাপারে বারমারী ধর্মপল্লির পালপুরোহিত রেভারেন্ট মনিন্দ্র এম. চিরান বলেন, এই তীর্থ স্থানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পানি সরবরাহের ব্যাবস্থা, ল্যাট্রিন স্থাপন, প্যান্ডেলের নিচের স্থান ও ক্রুশের পথ পাকাকরন, তীর্থ যাত্রীদের আবাসন তথা থাকার ব্যাবস্থা করা এবং পাহাড়ী ঢলের সময় পানি নিষ্কাশনের ব্যাবস্থা করা একান্ত জরুরি। আর এসব করতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এ জন্য তিনি সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

রাজধানী ঢাকা শহর থেকে ২২০ কিমি, ময়মনসিংহ থেকে প্রায় ১০০ কিমি, শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৫ কিমি ও নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ১৬ কিমি উত্তরে বাংলাদেশ-ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষা সবুজ শ্যামলিমাময় পাহাড় ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের অপূর্ব লীলাভূমি বারমারী খ্রিস্টধর্মপল্লিতে এ তীর্থস্থানের অবস্থান। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের ১৪ টি ধর্মপল্লির ও সারা দেশের হাজার হাজার খ্রিস্টভক্তদের প্রাণের দাবি ছিল মা মারিয়াকে ভক্তি-শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উপযুক্ত স্থান লাভের। আর বারমারীতে এ স্থান পেয়ে খ্রিস্ট ভক্তরা যেন মহাখুশি।

নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়