News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ২৯ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ১৭:৪৩, ২ মার্চ ২০২০

গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি গণবিরোধী, বাতিল করুন: বিএনপি

গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি গণবিরোধী, বাতিল করুন: বিএনপি

ঢাকা: সরকারের গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে তা বাতিল করে আবারো গণশুনানির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করারও দাবি জানিয়েছে দলটি।

শনিবার দুপুরে নয়াপলন্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ দাবি জানান।

লিখিত বক্তব্যে রিপন বলেন, “এ বছরের শুরুতে অস্থির রাজনৈতিক সময়ে ‘বিনা ভোটের নির্বাচিত সরকারের’ মতো বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন তথাকথিত লোক দেখানো শুনানির নামে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির যে ঘোষণা দিয়েছে- বিএনপি তার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে।”

গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক দাবি করে তিনি বলেন, “জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করা দল হিসেবে বিএনপি মনে করে, এ দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক এবং এর ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা আরেক দফা দুর্ভোগে নিপতিত হবেন। যখন সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় তাপে অস্থির এবং আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় মানুষের এমনিতেই নাভিশ্বাস, তখন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে সংসার চালাতে তাদের আরো হিমশিম খেতে হবে।”

রিপন বলেন, “গ্যাস খাতে যেখানে সরকারের ভর্তুকি দিতে হয় না এবং লোকসানও নেই বরং পাঁচ বছরে যেখানে পেট্রোবাংলা ২০ হাজার ৮০ কোটি টাকা লাভ করেছে, সেখানে গৃহস্থালী কাজে এক বার্নার ও দুই বার্নার চুলায় এক লাফে দুইশ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতি নিদারুণ অবিচার। শুধু তাই নয়, আবাসিক লাইনে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৫.১৬ টাকা থেকে সাত টাকা করেছে।”

জনগণের প্রকৃত ভোটে নির্বাচিত হলে সরকার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতো মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় আসা যায় বা ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখা যায় বলে তারা দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা যেমন ভাবেননি, তেমনি কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-রফতানিতে এই দাম বৃদ্ধি কীভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সে বিষয়টিও আমলে নেননি।”

গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল বৃদ্ধির বিপক্ষে বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে রিপন বলেন, “আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ও কমে যাওয়ারই কথা। কিন্তু তা না করে সরকার উল্টো বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে আর গ্যাসখাত লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা অত্যন্ত অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। আর্ন্তজাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম গত এক বছরের তুলনায় এক তৃতিয়াংশে নেমেছে এবং অব্যাহতভাবে তেলের দাম কমছে। কিন্তু বাংলাদেশে বিদুত্যের দাম বাড়ায় দেশের জণগণ কোনো সুফল পাচ্ছে না। আমরা সরকারের এই গণবিরোধী নীতির তীব্র সমালোচনা করছি।”

বিএনপি মুখপাত্র বলেন, “আমরা জানি, সরকারের আজ্ঞাবাহী ‘বিইআরসি’ দাম বাড়ানোর জন্য দেশের অস্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে তিনদিনব্যাপী গণশুনানি করেছে, সেই গণশুনানির রায় ছিল দাম না বাড়ানোর। কিন্তু লোক দেখানো শুনানির নামে নিজেদের ইচ্ছামতো তারা গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। আমাদের দল বিইআরসির মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণাকে বাতিলের দাবি জানাচ্ছে এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন করে গণশুনানির আয়োজন করে বিএনপিসহ দেশের সকল স্টেক হোল্ডারদের মতামত নেওয়ারও আহ্বান জানাচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য পুনরায় পর্যালোচনার জন্য শাসকদলের এক নেতাও দাবি করায় বিষয়টি প্রমাণিত, বিএনপি সরকারের শুধু বিরোধীতার নীতি থেকে এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিকে প্রতিবাদ করছে না বরং জণগনের স্বার্থে কথা বলছে।”

রিপন বলেন, “বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এবং বিইআরসি চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির স্বপক্ষে যে যুক্তি তুলে ধরেছেন, এর সারবত্তা না থাকায় আমাদের দল তা প্রত্যাখ্যান করছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, সিস্টেম লস কমাতে পারলে মূল্যবৃদ্ধির বোঝা জণগণের ওপর চাপাতে হতো না। বিইআরসি চেয়ারম্যান ‘পে-স্কেল আসিতেছে’ শুনিয়ে আগাম মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা জিজ্ঞেস করতে চাই গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সরকারি পে-স্কেলের আওতায় কতজন? জণগণের প্রতি মায়া-শ্রদ্ধা না থাকার কারণেই এসব উদ্ভট যুক্তি তারা তুলে ধরেছেন! তার অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ আরো বেশি হাস্যকর। বাংলাদেশের মানুষের আয় কি অস্ট্রেলিয়ার মতো?”

তিনি বলেন, “আমাদের অজানা নয় যে, প্রায় প্রতিবছর বিদ্যূৎ খাতে দুই হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে গুনতে হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের দাম সমন্বয় না করার জন্য।”

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড লিকুইড ফুয়েল ফায়ার্ডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে ২৮৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়ে থাকে, তার বেশির ভাগই হচ্ছে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল স্থাপনা থেকে। পিডিবি ৬২ টাকা দরে ফার্নেস অয়েল ও ৬৮ টাকা দরে ডিজেল অয়েল কিনে থাকে প্রতি লিটার হিসেবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন থেকে। অন্যদিকে প্রাইভেট পাওয়ার প্রজেক্টগুলো যথাক্রমে ৩৫ ও ৪০ টাকা দরে বিদেশ থেকে আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে উৎপাদন মূল্য পিডিবির দ্বিগুণ হওয়ায় ভর্তুকি গুণতে হয়, যার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।”

নিউজবাংলাদেশ/আরআর/এফএ/এজে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়