News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ২৮ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ০৯:১৭, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

গোপনে ভারত গেলেন নিখোঁজ স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি

গোপনে ভারত গেলেন নিখোঁজ স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি

কুষ্টিয়া: গাজীপুর থেকে নিখোঁজ কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান লাবু বাড়ি ফিরে অনেকটা চুপিসারে ভারতে চলে গেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। বেনাপোল স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা মোমিন উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে লাবুর পরিবার এ নিয়ে সরাসরি মুখ খুলছে না।

গত শুক্রবার গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ তিন জনকে র‌্যাব ধরে নিয়ে যায়। এরপর লাবুসহ রিসোর্ট মালিককে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে নিয়ে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ব্যবসায়ী আকতারুজ্জামান লাবু গত বুধবার রাতে বাড়ি ফিরে আসেন। তাকে র‌্যাব সদস্যরা ছেড়ে দেয়। বাড়ি ফেরার পর খবরটি জানাজানি হলে সাংবাদিকরা তার বাড়িতে ভিড় জমায়। তবে তার আগেই লাবু অত্যন্ত গোপনে যশোরে তার শ্বশুর বাড়ি চলে যান।

সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে পেরে তার পরিবারের সদস্যদের ফোন দিলে সরাসরি কেউ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না। লাবুর ছোট ভাই ওয়াহিদুজ্জামান লাইজুর সাথে কথা হলে তিনি জানান, লাবু ফিরে এসেছেন, তিনি ভালো আছেন।

এদিকে লাবুর ফিরে আসার খবরটি সাংবাদিকরা জানলেও কোনো মাধ্যমই সরাসরি স্বীকার করছিল না। গত বৃহস্পতিবার একটি মাধ্যমে জানা যায়, লাবু র‌্যাব হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়ে চুপিসারে ভারতে চলে গেছেন। পরে তার বিষয়টি নিয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে যোগাযোগ করা হয়।

দুপুর দুটার দিকে এমিগ্রেশন কর্মকর্তা মোমিন উদ্দীন কুষ্টিয়া স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা লাবুর ভারত যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কুষ্টিয়ার কোর্টপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল হাসানের ছেলে আক্তারুজ্জামান লাবু সকাল ১১টায় বর্ডার পার হন। তার পাসপোর্ট নম্বর- বিই ০২০৮৫৭৫।

গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তাও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিকে, র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর কুষ্টিয়ায় অবস্থান না করে তড়িঘড়ি ভারত চলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, আইন-শৃংখলা বাহিনীর কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে তাকে শর্ত দেওয়া হয় আপাতত দেশে থাকা যাবে না। তাকে ভারত চলে যেতে হবে। আর এসব বিষয়ে সাংবাদিকসহ কারো কাছে মুখ খোলা যাবে না। তাই কুষ্টিয়ায় ফিরে বাড়িতে অবস্থান না করে যশোরে শ্বশুর বাড়িতে চলে যান লাবু। সেখানে এক রাত থেকে বৃহস্পতিবার তিনি ভারতে চলে গেছেন।

অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার পরামর্শে তিনি দেশ ছেড়েছেন। সেখানে কিছুদিন থেকে দেশে ফিরবেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে লাবুকে আর দেখা নাও যেতে পারে বলে ওই সূত্রটি জানায়।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি লাবু ও রিসোর্ট মালিক মনির ছাড়া পেলেও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজের সন্ধান মেলেনি। তাকে নিয়ে নানা খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে কোনো খবরের সত্যতা মিলছে না। সাংবাদিকরাও নানা বিভ্রান্তিকর খবর পাচ্ছে নানা সময়। সবুজের ভাগ্যে কী ঘটেছে তাও নিশ্চিত করে জানা যাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার সারাদিনই শোনা যাচ্ছিল সবুজকে কোর্টে হাজির করা হচ্ছে। পরে শোনা যায়, কোর্টে তোলার আগে আইন-শৃংখলা বাহিনী ব্রিফিং করবে। সবুজের ঘনিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়িক পার্টনার ঢাকায় বসে এ রকম খবর তার বাড়িতে দেয়। তবে শুক্রবার পর্যন্ত সবুজের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আইন-শৃংখলা বাহিনী এ নিয়ে কোনো তথ্য দেয়নি।

সবুজের স্ত্রী জিনিয়া জানান, বিভিন্ন সময় নানা খবর পাচ্ছি। এসব খবরে আশায় বুক বাঁধছি। তবে কোনো সত্যতা মিলছে না। গুজবে কান দিয়ে চলতে হচ্ছে। লাবু ও মনির যখন ফিরেছে আমার স্বামীও ফিরবে বলে আশা করছি।

লাবু-সবুজকে আটকের আগে র‌্যাব সদস্যরা ওই রিসোর্টের মালিক মনিরুজ্জামান মনিরকেও তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে। গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মনিরকে ছেড়ে দেয় র‌্যাব। লাবু এবং সবুজ ‘র‌্যাবের হাতে আটক’ হওয়ার বিষয়টি সবাই নিশ্চিত বলে দাবি করলেও র‌্যাব সদস্যরা দাবি করে আসছে, তারা লাবু এবং সবুজ নামের এমন কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি।

সবুজ-লাবুর সন্ধান দাবিতে রোববার সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী জিনিয়া কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-১ এ পিটিশন দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালত এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার ও মডেল থানার ওসিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

গত মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে লাবু-সবুজকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। র‌্যাব বা অন্য কোনো সংস্থা তাদের গ্রেফতার বা আটক করেছে কি না এমন তথ্যও পুলিশের কাছে নেই। হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় গ্রেফতারের জন্য তারা শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে খুঁজছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ/এজে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়