শিশু ধর্ষণ
রিভিউয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড শুক্কুর আলীর
ঢাকা: মানিকগঞ্জে সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে শুক্কুর আলীর ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফাঁসির আদেশের বিষয়ে রিভিউ করলে শুনানি শেষে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন।
এর আগে গতকাল রোববার শুক্কুর আলীর রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষ করা হয়।
আদালতে শুক্কুর আলীর পক্ষে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড ট্রাস্ট সার্ভিসের (ব্লাস্ট) হয়ে প্রথম দিনে শুনানি করেন এম কে রহমান। শুনানিতে তিনি বলেছিলেন বৈচারিক আদালতের রায়ের সময় তার বয়স অল্প থাকায় তাকে সর্বোচ্চ দণ্ড দেওয়া ঠিক হয়নি। তাছাড়া আইনের যে দু’টি ধারায় বিচার করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ যেহেতু ধারা দু’টি অবৈধ ঘোষণা করেছেন, সেহেতু তাকে দণ্ড থেকে রেহাই দেওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ১১ জুন শুক্কুর আলী মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে। পরে মানিকগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৬(২) ধারায় এ মামলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০১ সালের ১২ জুলাই শুক্কুর আলীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন বৈচারিক আদালত।
বৈচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জেল আপিল দায়ের করেন শুক্কুর আলী। কিন্তু হাইকোর্ট তার আবেদন খারিজ করে দিয়ে ২০০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ফাঁসির রায় বহাল রাখেন।
পরে ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন শুক্কুর আলীর পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী এবিএম বায়েজীদ। আপিল বিভাগ একই বছরের ৪ মে পুনর্বিবেচনার আবেদনও খারিজ করে দেন। রিভিউ খারিজের পর ২০০৫ সালে শুকুর আলীর মা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে একটি আবেদন জমা দেন।
এদিকে বৈচারিক আদালত শুক্কুর আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এক বছর আগে ২০০০ সালে জাতীয় সংসদ ১৯৯৫ সালের আইনটি বাতিল করে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’ নামে আরেকটি আইন প্রণয়ন করে। ওই আইনে ধর্ষণের ফলে বা ধর্ষণের পর কাউকে হত্যা করা হলে তার শাস্তির বিধান রাখা হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু শুক্কুর আলীর বিচার হয় ১৯৯৫ সালের আইনে। যে আইনে ধর্ষণের পর হত্যার অপরাধের শাস্তির বিধান ছিলো শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ড। এ বিষয়টিকে সামনে এনে শুক্কুর আলীর পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। তারা এক দেশে দুই আইনের এই বিচার প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। এ সংক্রান্ত ১৯৯৫ সালে প্রণীত নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৬(২) ধারায় যেখানে শাস্তির বিধান ছিল কেবল মৃত্যুদণ্ড তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। হাইকোর্ট ২০১০ সালের ২ মার্চ ৬(২) ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন।
কিন্তু শুক্কুর আলীর বিচার নিয়ে হাইকোর্ট কোনো মন্তব্য করেননি।
পরে বিষয়টি আপিলে যাওয়ার পর গত ৫ মে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে শুক্কুর আলীর দণ্ডও বহাল রাখেন।
শুক্কুর আলীর দণ্ড বহাল রাখা সংক্রান্ত আপিল বিভাগের এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দায়ের করে ব্লাস্ট।
নিউজবাংলাদেশ.কম/আইএ/এফই
নিউজবাংলাদেশ.কম








