হাতিরঝিলে প্রতিদিন লাখ টাকার চাঁদাবাজি
ঢাকা: রাজধানীর হাতিরঝিলে শুরু হয়েছে ‘ওপেন সিক্রেট’ চাঁদাবাজি। এর নেপথ্যে রয়েছে কমিউনিটি পুলিশ। সারাদিনে এ ঝিলের একটি অংশেই চাঁদা ওঠে লাখ টাকার ওপরে। আর এর ভাগ চলে যায় পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক ‘গডফাদারদের’ পকেটে।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে হাতিরঝিলের রামপুরা টেলিভিশন সেন্টারের সামনের অংশে গিয়ে দেখা যায়, ঝিলের দ্বিতীয় লেনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে গোটা বিশেক মাইক্রোবাস। অথচ হাতিরঝিলের এ লেনে যাত্রী ওঠানো তো দূরের কথা, দাঁড়ানোরও নিয়ম নেই। দাঁড়াতে হলে পাশের প্রথম লেনে গিয়ে নির্ধারিত স্টপেজে থামতে হবে।
নিয়ম না মেনে হাতিরঝিলের দ্বিতীয় লেনে স্ট্যান্ড বানিয়ে অবাধে চলছে যাত্রী টানার কাজ। এতে একদিকে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, অন্যদিকে চাঁদার টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই চলছে বিবাদ-সংঘর্ষ।
মাইক্রো স্ট্যান্ডের লাইনম্যান রমিজের সঙ্গে পরিচয় গোপন করে কথা বলে জানা যায়, সেখানে তালিকাভুক্ত মাইক্রোবাস রয়েছে ৫৫টির মতো। এগুলোর কাছ থেকে প্রতি ট্রিপে বিশ টাকা করে নেওয়া হয়। হাতিরঝিলে যানজটের ঝামেলা না থাকায় প্রতিদিন প্রতিটি গাড়ি গড়ে ৫০টির ওপরে ট্রিপ মারে।
এছাড়া তালিকামুক্ত কিছু গাড়ি আছে। এসব গাড়ির ক্ষেত্রে চাঁদা নেওয়া হয় ৫০ টাকা করে। এ গাড়িগুলো মূলত বিভিন্ন অফিসের এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন। অফিসের ‘স্যারদের’ নামিয়ে দিয়ে গাড়িগুলো চলে আসে হাতিরঝিলে। কয়েকটি ট্রিপ মেরে আবার ফিরে যায় অফিসে। তালিকাভুক্ত ও তালিকামুক্ত এসব গাড়ি থেকে দৈনিক প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি চাঁদা ওঠে।
কোথায় যায় চাঁদার টাকা? এ প্রশ্নের জবাবে লাইনম্যান জানান, চাঁদার বড় একটা অংশ সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে নেয় কমিউনিটি পুলিশ। বাকি টাকা চলে যায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে। আর লাইনম্যান পান প্রতিদিন পাঁচশো টাকা। এ প্রক্রিয়াতেই চলছে হাতিরঝিলের চাঁদাবাজি।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হতে শুরু হলো অপেক্ষা। কিছুক্ষণ পরই মাজেদ নামের কমিউনিটি পুলিশির এক সদস্য এগিয়ে এলেন রমিজের দিকে। রমিজও তার আসা দেখে পকেটে হাত দিয়ে ৫০ টাকার একটি নোট বের করলেন। এরপর দুজনই চলে গেলেন একটু আড়ালে, ঝাউগাছের কোনায়। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন নিউজবাংলাদেশের ফটোসাংবাদিক। তার ক্যামেরায় ধরা পড়ে লাইনম্যান ও কমিউনিটি পুলিশের চাঁদার টাকা ভাগ-বাটোয়ারার চিত্র।
পরে বিষয়টি নিয়ে ট্রাফিকের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার আবু ইউসুফের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “হাতিরঝিলের দ্বিতীয় লেনে কোনো গাড়ি থামানোর কথা না। যদি সেখানে কোনো গাড়ি থামে, তাহলে অবশ্যই কমিউনিটি পুলিশের দায়িত্ব তাকে দ্রুত স্থান ত্যাগে বাধ্য করা। কারণ ঝিলের রাস্তাগুলি সরু। এখানে নির্ধারিত স্থান ছাড়া কোনো যানবহন থামলেই যানজটের সৃষ্টি হবে।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনএইচ/এজে
নিউজবাংলাদেশ.কম








