জাসাসের হাল ত্যাগীদের হাতে আসবে কি?
ঢাকা: ব্যর্থদের বাদ দিয়ে এবার ত্যাগী নেতাদের নিয়ে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু বিভিন্ন গ্রুপের লবিংয়ের কারণে সে উদ্যোগ সফল হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠনের উদ্যোগের অংশ হিসেবেই জাসাস কমিটি পুনর্গঠনে হাত দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র নেতা ও জাসাস সূত্রে জানা গেছে, মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে শিগগিরই পুনর্গঠিত হতে যাচ্ছে জাসাস। আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামের কথা মাথায় রেখেই এবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাসাসের নতুন কমিটি করবেন।
দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, অভিজ্ঞ ও পূর্বে দল পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে এমন কারো হাতেই জাসাসের দায়িত্ব তুলে দিতে চান বিএনপি প্রধান। এ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। যে কোনো সময় এ কমিটি ঘোষণা হতে পারে।
দলের এমন সিদ্ধান্তের পরই নড়েচড়ে বসেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা পদ-পদবী পাওয়ার আশায় জোর লবিং তদবির শুরু করেছেন। আর এই সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন দলের হাইব্রিড জাতীয় নেতারা। তারা নিজেদের মতো করে পছন্দের নেতাদের দিয়ে বিভিন্ন সময়ে কমিটি গঠন করে দলের হাইকমান্ডের কাছে জমা দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
সাংস্কৃতিক কর্মীরা বলছেন, রমনা বটমূলে জাসাস আয়োজিত পহেলা বৈশাখের একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খালেদা জিয়া রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। এই সংগঠনের স্বর্ণযুগ ছিলো স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছাড়াও রাজনৈতিক আন্দোলনে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে জাসাস। অথচ দীর্ঘ ৩৬ বছরের পথচলায় সবচেয়ে ব্যর্থ হচ্ছে বর্তমান কমিটি।
জাসাস নেতাদের আশঙ্কা, যেভাবে বিভিন্ন গ্রুপ তাদের পকেট কমিটি গঠনের জন্য লবিং শুরু করেছে, তাতে খালেদা জিয়া যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চাচ্ছেন সেই উদ্দেশ্য সফল হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা আছে।
তাদের মতে, একজন অভিজ্ঞ ও দলের জন্য নিবেদিত ব্যক্তির হাতে জাসাসের দায়িত্বভার দিলে সংগঠনের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে, কমিটির বাণিজ্য বন্ধ হবে এবং আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, জাসাসের নতুন কমিটির সভাপতি হওয়ার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি এবং বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, সাবেক চিত্র নায়ক আশরাফ উদ্দিন উজ্জল ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ছড়াকার আবু সালেহ। তবে মাঠ পর্যায়ের একটি গ্রুপ অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে সভাপতি হিসেবে চান। তবে রেজাবুদ্দৌলা বা দুলুর সভাপতি হওয়ার সম্ভবনাই বেশি।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছেন জাসাস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার। এছাড়া চিত্র নায়ক হেলাল খান, কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক। তবে হেলাল খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি ১/১১ এর সময় নিজের টাকা খরচ করে নিজের পরিচালনায় ‘জেগে ওঠো বাংলাদেশ’ নামে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারেক রহমান ও বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন।
এছাড়া কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, রিজিয়া পারভীন, জাসাস উত্তরের আহ্বায়ক ডা. আরিফুর রহমান মোল্লা, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক খালেদ এনাম মুন্নাও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন বলে জানা গেছে।
সংগঠনের নতুন কমিটি গঠন প্রসঙ্গে দলের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। নতুন কমিটি হলে পরিবতর্ন আসে। উপযুক্ত ব্যক্তিরাই উপযুক্ত স্থান পাবেন।”
তিনি বলেন, “এটা একটা সাংস্কৃতিক সংগঠন। অতীতের কর্মকাণ্ড অবদান মূল্যায়ন করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে আমাদের পরামর্শ থাকবে। সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে চেয়ারপারসন সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যেদিন চাইবেন সেদিন কমিটি ঘোষণা হবে।”
সংগঠনের নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী বলেন, “দলের এমন সিদ্ধান্তের কথা আমিও শুনেছি।”
দায়িত্ব গ্রহণ করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ছিলাম। এখনও বিএনপির সঙ্গে আছি। চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে দলের স্বার্থে যে দায়িত্ব দেবেন তা আমি পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
এসব বিষয়ে জানতে সভাপতির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর আত্মগোপনে চলে যান এম এ মালেক।
কমিটি গঠনের প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক মনির খান নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “২০১২ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে শুনেছি। এমনটা হলে অবশ্যই সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের ডাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।”
কমিটি কেমন হওয়া উচিৎ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অনেকে হয়তো কমিটির তালিকা জমা দিয়েছেন। এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। সকলকে নিয়েই কমিটি করতে হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার বলেন, “শুনেছি কমিটি পুনর্গঠন করে যে কোনো সময় নতুন কমিটি দেওয়া হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে শিগগিরই কমিটি পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। নতুন কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চাই।”
তিনি বলেন, “পদের জন্য রাজনীতি করি না। বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে দায়িত্ব দেবেন তা পালন করতে প্রস্তুত।”
অযোগ্য বর্তমান কমিটির সভপতি-সাধারণ সম্পাদক
জাসাসের নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০১০ সালে এমএ মালেককে সভাপতি ও মনির খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৪৫ সদস্য বিশিষ্ট জাসাসের বর্তমান কমিটি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে দলকে সংগঠিত করতে এবং জাসাসের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন তারা। তাছাড়া, কমিটি গঠনের পর থেকে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে জাসাস।
অভিযোগ আছে, ১/১১ পট পরিবর্তনের সময় তখনকার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন এম এ মালেক। মালেক ওই সময়ের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ আমেদ ঠাকুরের নেতৃত্বে জাসাসের সুবিধাবাদী একটি অংশ মান্নান ভুঁইয়ার সাথে যোগ দেন। অথচ সংস্কার পন্থি এম এ মালেক বিএনপির এক বিশেষ সিনিয়র নেতার সুপারিশের কারণে সভাপতি হন। অথচ বিএনপির দুঃসময়ে যেসব জাসাস নেতা কাজ করেছেন তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাননি।
এছাড়া জাসাসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কণ্ঠশিল্পী মনির খানের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। গত পাঁচ বছরে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে জেলে যাওয়া নেতাকর্মীদের কোন খোঁজ-খবরও নেননি তিনি। এমনকি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে কোকো মারা যাওয়ার দিন সিঙ্গাপুরে শো করতে যান মনির খান। সিঙ্গাপুর থেকে অসংখ্য নেতাকর্মী মালয়েশিয়ায় কোকোর জানাযায় অংশ নিলেও যাননি মনির খান। গত পাঁচ বছরে দেশে বিদেশে শো নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সংগঠনে সময় দিতে পারেননি তিনি। ফলে সংগঠনও আশানুরূপ এগোয়নি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/আরআর/এজে
নিউজবাংলাদেশ.কম








