শাবিপ্রবিতে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
সিলেট: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমিনুল হক ভূইয়ার পদত্যাগের দাবিতে এ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। রোববার সকাল সোয়া আটটার দিকে উপাচার্য ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকসহ অন্তত সাত শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে ছাত্রলীগ নেতারা হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে উল্টো শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ধাক্কাধাক্কি করার অভিযোগ করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে সকাল ৯টা থেকে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি দেন আন্দোলনরত শিক্ষকদের একাংশ। অন্যদিকে সকাল ৭টা থেকেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যানারে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে অবস্থান নেন।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপাচার্য তার কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে আন্দোলনরত শিক্ষকরা তাকে ঢুকতে বাধা দেন। তখন ছাত্রলীগ কর্মীরা এসে শিক্ষকদের ব্যানার কেড়ে নেয় এবং তাদের গলা ধাক্কা দিয়ে এবং মারধর করে সরিয়ে দেয়। এ ফাঁকে উপাচার্য ভবনে ঢুকে দোতলায় নিজের কার্যালয়ে চলে যান।
শিক্ষকদের ওপর হামলাকারীরা এ সময় স্লোগান দেয়- ‘শাবিপ্রবির মাটি/ছাত্রলীগের ঘাঁটি’।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ, সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান, উপাচার্যপন্থি হিসেবে পরিচিত প্রক্টর অধ্যাপক কামরুল হাসান ও ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারকে এ সময় কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা কেউই ছাত্রলীগ কর্মীদের ঠেকানোর চেষ্টা করেননি।
জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন দুই পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ছাত্রলীগ কর্মীদের কাছে পাত্তা পাননি তিনি।
উপাচার্য ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পর ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষকদের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় নতুন করে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তাদের ধাক্কায় অধ্যাপক ইয়াসমিন হক মাটিতে পড়ে যান। এ সময় এক ছাত্রলীগ কর্মীকে এক শিক্ষকের গায়ে লাথি মারতেও দেখা যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের একাংশের নেতা ও ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ শামসুল আলম বলেন, “ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে ড. ইয়াসমিন হকসহ অন্তত সাত শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে।”
ছাত্রলীগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “উপচার্য আমাদের ওপর ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়েছেন।”
সৈয়দ শামসুল আলম ও ইয়াসমিন হক ছাড়াও মারধরের শিকার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গণি, অধ্যাপক মোস্তফা কামাল মাসুদ, এ ন ক সমাদ্দার ও সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক উদ্দিন।
পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ইয়াসমিন হক সাংবাদিকদের বলেন, “এই যে পরিবেশ নষ্ট করা হলো, এর জন্য ভাইস চ্যান্সেলরই দায়ী থাকবেন।”
সকালে হামলা করার জন্য উপাচার্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাতে বৈঠক করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি অঞ্জন রায়ের দাবি, ছাত্রলীগ কোনো হামলার ঘটনা ঘটায়নি। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থী ও উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকদের পৃথক কর্মসূচি চলছে। উপাচার্য ভেতরে যেতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা বাধা দেন এবং ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেন। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে ঢুকিয়ে দেয় মাত্র।
শিক্ষকদের বাধা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ বলেন, “বাধা দেওয়ার বিষয়টি সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত না। সবাই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে এতে অংশ নিয়েছে।”
এ বিষয়ে জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন বলেন, “আপনারা তো সবই দেখছেন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। নো কমেন্টস।”
উপাচার্য আমিনুল হক ভূইয়া বলেন, “আজ একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হওয়ার কথা ছিল। সেখানে যোগ দেওয়ার জন্য যাওয়ার পথে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা আমাকে বাধা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আর ঘটেনি।”
কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ১২ এপ্রিল থেকে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষকদের একাংশ। অন্যদিকে এই আন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা হিসেবে আখ্যা দিয়ে সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের একটি অংশ ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তার চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে উপাচার্যের পক্ষে অবস্থান নেন। পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষকদের আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন করছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ।
এ ঘটনার খবর ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিকও ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়।
যমুনা টেলিভিশনের সিলেট ব্যুরো প্রধান মাহবুবুর রহমান রিপন বলেন, “সারা দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাদের বিচার হয়নি। এ জন্যই তারা আজ এ ঘটনা ঘটাল।”
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব সাংবাদিক লাঞ্ছিতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস/এফই/এজে
নিউজবাংলাদেশ.কম








