কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একের পর এক নির্যাতন
দিনাজপুর: কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একের পর এক নির্যাতন করা হচ্ছেন এক গৃহবধূ ও তার বাবাকে। এর আগে নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় মামলা করলেও আবারও নতুনভাবে নির্যাতনের শিকার হলেন গৃহবধূ রেহেনা বেগম (২৩)।
রেহেনা চিরিরবন্দর উপজেলার ৬ নং আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের গালতৈড় কাঁচলডাঙ্গা গ্রামের এনামুল হকের মেয়ে।
এর আগে ১০ জুলাই রেহেনা নির্যাতনের শিকার হন। স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, আগের নির্যাতনের বিচারের জন্য মামলা দায়ের করলেও পুলিশের উদাসীনতায় দ্বিতীয় দফায় নির্যাতনের শিকার হতে হলো তাকে।
রেহেনা বেগমের আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রেহেনাকে একই গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে ওহেদুল ইসলাম কুপ্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাব রেহেনা প্রত্যাখ্যান করলে ভারতীয় এক পর্নোফিল্ম রেহেনার বলে এলাকায় ছড়িয়ে দেয়।
সূত্র আরো জানায়, এ ঘটনায় ৩ জানুয়ারি শালিসের নামে আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জামাল উদ্দিন ও আবু বক্কর সিদ্দিক তার পরিবারকে একঘরে করে রাখার ফতোয়া জারি করেন। একঘরে থাকা অবস্থায় শালিসের বিরুদ্ধে কথা বলায় ১০ জুলাই শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে আবু বক্কর সিদ্দিকের হুকুমে তার তিন ছেলে রাশেদুল, সহিদুল ও ওহেদুলসহ ছয়-সাতজন এনামুল হককে ধরে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্যাতন করে। এসময় তার দুই পা ভেঙে যায়।
রেহেনা বেগম ও তার স্বামী হোসেন আলী এনামুলকে উদ্ধার করতে এলে রেহেনাকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে তারা অজ্ঞান করে ফেলে। এ ঘটনায় হোসেন আলীরও পা ভেঙে যায়।
এরপর ২৭ জুলাই এনামুল হক বাদী হয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামিরা রেহেনা ও এনামুলকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সন্ধ্যায় রেহেনা বেগমকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন ও শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটে।
জেলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের বি-৯ নং বেডে শুয়ে রেহেনা বেগম নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “সোমবার সন্ধ্যায় আমি পার্শ্ববর্তী ভাইয়ের বাড়ি থেকে মোবাইলে চার্জ দিয়ে বাড়িতে ফিরছিলাম। এসময় একই এলাকার আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে সহিদুল মাস্টার, মকবুল হোসেনের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম ও মৃত খয়ের উদ্দিনের ছেলে রকিবুল ইসলাম আমাকে আটক করে।”
তিনি আরো বলেন, “তারা আমাকে পুকুরপারে একটি আমগাছের সঙ্গে বেঁধে মারধোর করতে থাকে। এসময় তারা আমার কাপড় ছিড়ে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। আমি চিৎকার দিলে তারা আমার মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। এরপর আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তারা সাদা কাগজে আমার সই নিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।”
এরপর পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসীরা তাকে রাতেই দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. সীমা বসাক নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “রোগীর স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে আঘাত করা হয়েছে। এর ফলে সেসব স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। মারাত্মক আঘাতের ফলে তার শরীরে ব্যথা ও জ্বর আছে।”
রেহেনা বেগমের পিতা এনামুল হক নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “এর আগে আমাদেরকে মারধর ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে একঘরে করে রাখার বিরুদ্ধে চিলিরবন্দর থানায় মামলা করি। কিন্তু ওসি তিন লাখ টাকার বিনিময়ে মামলার আরজি পাল্টে দেন। আসামিদের পক্ষ নিয়ে ওসি আমাদের ভয় দেখিয়ে আসছিল।”
হাসপাতালে রেহেনা বেগমকে দেখতে আসা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি কানিজ রহমান নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “উৎকোচের মাধ্যমে টাকা নিয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে রেহেনা বেগমকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আমরা এর আগেও তার বিষয়ে সুদৃষ্টি দিতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি।”
তিনি আরো বলেন, “এরপরও এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটল। এজন্য পুলিশ দায়ী। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আমরা রাস্তায় নামব।”
চিরিরবন্দর থানার ওসি আনিছুর রহমান নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “ঘটনা জানার পরপরই রাতেই অভিযুক্তদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদেরকে পাওয়া মাত্রই গ্রেফতার করা হবে। এ ব্যাপারে রেহেনা বেগমের স্বামী হুসেন আলী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।”
তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “এর আগের মামলাটির আসামিদের আটক করা হয়েছিল। কিন্তু তারা আদালতের মাধ্যমে জামিনে রয়েছে। সেখানে পুলিশের কোনো কিছু করার নেই। তবে নতুন এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এটিএস
নিউজবাংলাদেশ.কম








