৫৯ হাজার ৩৮১ কোটি টাকার ৪ প্রকল্প অনুমোদন
ঢাকা: সিরাজগঞ্জে ৪০০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ ভারতের খোলাবাজার থেকে দৈনিক ৩০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ। এছাড়া আরও দুটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ চারটি প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫৯ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা।
বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ চারটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বিল্ড-অউন-অপারেট (বিওও) পদ্ধতিতে সিরাজগঞ্জে ৪০০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েলভিত্তিক আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ হচ্ছে ২২ বছর। সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি ‘সেম্বকর্প ইউটিলিটিজ পিটিই লিমিটেড’ ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ‘নওপাজেকো লিমিটেড’ যৌথভাবে এটি নির্মাণ করবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দুবছরের মাথায় এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং তিন বছর পূর্ণ হলে এখান থেকে পুরো ৪ শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহারে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য হচ্ছে ৩ টাকা ১৯ পয়সা। এইচএসডি ব্যবহারে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য হচ্ছে ১৩ টাকা ৫৭ পয়সা।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, সিরাজগঞ্জের এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ২২ বছরে সরকারকে ৫৬ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে জ্বালানি গ্যাস ব্যবহারে উৎপাদিত বিদ্যুতের জন্য (ন্যূনতম ৮৪.৬ % প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে) ২১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা এবং এইচএসডি ব্যবহারে উৎপাদিত বিদ্যুতের জন্য (ন্যূনতম ৪০ % প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে) ৩৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
সিরাজগঞ্জে ৪০০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনের জন্য ইতোপূর্বে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘ল্যানকো পাওয়ার’কে মনোনীত করা হয়েছিল। কিন্তু যথাসময়ে ল্যানকো চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ায় গত ৯ জানুয়ারি তাদের ‘লেটার অব ইন্টেন্ট’ বাতিল করা হয়। পরবর্তী সময়ে সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি ‘সেম্বকর্প ইউটিলিটিজ পিটিই লিমিটেড’ ও বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান ‘নওপাজেকো লিমিটেড’ যৌথভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে।
তিনি বলেন, ভারতের কাছ থেকে ১ বছরের জন্য দৈনিক ৩০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করা হবে। এতে বিদ্যুৎ ক্রয়ের জন্য ‘লিমিটেড টেন্ডারিং পদ্ধতি’র মাধ্যমে ভারতের দুটি কোম্পানি এনভিভিএন ও পিটিসি-এর কাছ থেকে দরপত্র আহ্বানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পূর্বের প্রস্তাবে এজেন্ট চার্জসহ বিদ্যুতের মোট মূল্য ধরা হয়েছিল ৫৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা থেকে ২৩১ কোটি ৮ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, এ ছাড়া বৈঠকে আরও দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায় : ২৪টি নৌপথ)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কাটার সাকশন ড্রেজার দ্বারা গাগলাগড়-মোহনগঞ্জ অংশের নাব্য উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কাজটি পেয়েছে যৌথভাবে এএমডিএল-এডিএল।
অতিরিক্ত সচিব জানান, ‘সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন’ (সাসেক) সংযোগ সড়ক উন্নয়নের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা (ঢাকা-টাঙ্গাইল) অংশের ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করাসহ ধীরগতি যানবাহনের জন্য পৃথক লেন, ৫টি উড়াল সড়ক, ২৬টি ব্রিজ, ৬০টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। তিনটি লটে বিভক্ত এ কাজটি সম্পন্ন করতে তিনটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
প্রতিটি লটের কাজেই দুটি অংশ রয়েছে। প্রথম লটের প্রথমভাগে ভোগরা বাজার মোড় থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার বাইপাস সংযোগ সড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হবে। দ্বিতীয়ভাগে উন্নীত চার লেন সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হবে। প্রথম লটের পুরো কাজে ব্যয় হবে আয়কর ও ভ্যাটসহ ৭১৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কাজটি পাচ্ছে কেইরং-স্পেকট্রা জয়েন্ট ভেঞ্চার।
দ্বিতীয় লটের প্রথম ভাগে কালিয়াকৈর বাইপাস থেকে দুল্লামুরি পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নয়ন করা হবে। দ্বিতীয়ভাগে এ সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। দ্বিতীয় লটের পুরো কাজে ব্যয় হবে ৬৫৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এ কাজটি পাচ্ছে ‘এএমএল-এইচসিএমজেভি’।
তৃতীয় লটের প্রথমভাগে দুল্লামুরি থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ২২ দশমিক ৪ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হবে। দ্বিতীয় ভাগে এ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করা হবে। দু’টি ভাগে মোট ব্যয় হবে ৬৭৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ কাজটি পাচ্ছে ‘স্যামহুয়ান-মীর আকতার জয়েন্ট ভেঞ্চার লিমিটেড কোম্পানি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/টিআইএস
নিউজবাংলাদেশ.কম








