News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ৪ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ২১:২৮, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

পিনাক ৬ লঞ্চ ডুবির ১ বছর

২১ জনের পরিচয় আজও মেলেনি

২১ জনের পরিচয় আজও মেলেনি

মাদারীপুর: পদ্মায় স্মরণকালের ভয়াবহ নৌ দুর্ঘটনায় আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক ৬ নামের একটি লঞ্চ। এতে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ হন ৬৪ জন। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ২১ জনকে মাদারীপুরের শিবচর পৌর কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। এক বছরেও তাদের কারো পরিচয় চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। হদিস পাওয়া যায়নি দুর্ঘটনার শিকার পিনাক ৬ লঞ্চটিরও।

নিখোঁজদের পরিবারগুলোর দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। এ দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন জেলা থেকে উদ্ধার হওয়া লাশ নিয়ে আসা হয় শিবচরের পাঁচ্চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পিনাক ৬ লঞ্চে ওঠার ঠিক আগ মুহূর্তে শিবচরকে বিদায় জানিয়ে ফেসবুকে সেলফি দিয়েছিলেন শিকদার মেডিকেল কলেজের ছাত্রী নুসরাত জাহান হীরা। স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘গুড বাই শিবচর।’ শুধু হীরাই নয় তার সঙ্গে শিবচরকে চিরবিদায় জানালেন তার ছোট বোন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজের ছাত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্ণা ও খালাত বোন চীনের জইনুস মেডিকেল কলেজের ছাত্রী ও শরিয়তপুরে গঙ্গানগর এলাকার জান্নাতুল নাঈম লাকী। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি।

২০১৪ সালের ৪ আগস্ট আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে পদ্মায় ডুবে যায় পিনাক ৬ নামের লঞ্চটি। ৪৯ জনের লাশ বিভিন্ন জেলা থেকে উদ্ধার করে শিবচরের পাঁচ্চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়। নিখোঁজ হন ৬৪ জন। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ২১ জনকে শিবচরের পৌর কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রথম লাশটি উদ্ধার হয় হীরার। এর দুদিন পর লাকীর লাশ উদ্ধার হলেও নিখোঁজ থাকেন স্বর্ণা। তাদের পরিবারে আজও চলছে শোকের মাতম।

নিখোঁজ হীরা ও স্বর্ণার বাবা মো. নূরুল হক মিয়া বলেন, “দেখতে দেখতে একটি বছর কেটে গেল। ভাবতে পারিনি এক সঙ্গে তিন মেয়েকে হারাতে হবে। নিয়তির কাছে সবকিছুই হার মানে। ওদের কথা মনে পড়লে আজও চোখের পানিতে একাকার হয়ে যাই।”

শিবচরের পাঁচ্চর এলাকার বাসিন্দা রাশিদুল ইসলাম জানান, মর্মান্তিক এ লঞ্চ দুর্ঘটনার মামলার এক বছরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে মূল হোতারা। নৌপথে একের পর এক দুর্ঘটনার বিচারের আলোর মুখ দেখে না নিহত ও নিখোঁজদের পরিবার।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় কাওড়াকান্দি ঘাটের ইজারাদার আব্দুল হাই শিকদার, পিনাক ৬ লঞ্চের মালিক আবু বকর কালু মিয়া ও তার ছেলে লিমনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর লঞ্চের মালিক কালু মিয়া ও তার ছেলে লিমনকে গ্রেফতার করা হলেও লিমন জামিনে বেরিয়ে আসেন।

মাদারীপুরের সিভিল সার্জন বাসুদেব কুমার দাস জানান, বেওয়ারিশ ২১ জনের ডিএনএ টেস্ট এখনও হাতে পাওয়া যায়নি। হাতে পাওয়া গেলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানান, উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ২৭ জনের পরিবারকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। নাম-পরিচয়হীন লাশের ডিএনএ টেস্ট করার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা শেষে বাকিদের শনাক্ত করা গেলে তাদের পরিবারকেও আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।

পিনাক ৬ দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুর-উর রহমান বলেন, “আমরা পিনাক ৬ দুর্ঘটনার পর নৌ পথে দুর্ঘটনা শুন্যে নামিয়ে আনতে অনেকগুলো সুপারিশ করেছি। পিনাক ৬ আমাদের কাছে শিক্ষণীয়। তাই সুপারিশ বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। যার প্রমাণ এ বছরের ঈদ ব্যবস্থাপনায়। লঞ্চ ঘাটগুলোতে ইন্সপেক্টরসহ জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। চালকদের প্রশিক্ষণসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়