স্ত্রীকে পেটানোর ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল: নড়াইলে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে আহত করে হাসপাতালে পাঠানোর ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নড়াইল নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন আহত গৃহবধূর ভাই জুয়েল শেখ।
নড়াইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে করা মামলার নম্বর ১৪/১৫। বিজ্ঞ আদালতের বিচারক মো. আবুল বাশার মুন্সী মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে মামলা করার পরপরই মঙ্গলবার সকাল থেকে এ ঘটনা মিমাংসা করে অসুস্থ নাজকে বাড়ি ফিরিয়ে নেবার জন্য পুলিশ কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেনের পরিবারের লোকেরাসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং আরও কিছু লোকজন নিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভীড় জমায়। তারা শামীমা শারমিন নাজের হাত ধরে টানাটানি করে তাকে স্বামীর সংসারে ফিরে যাবার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এ সময় নার্স ও ডাক্তাররা ছুটে আসলে নাজের শ্বশুর বাড়ির লোকেরা পারিবারিক ব্যাপার বলে চালিয়ে দিতে চান। এ সময় মানসিক চাপে অসুস্থ নাজ আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে।
নাজের মা রাশিদা বেগম জানান, মঙ্গলবার সকালে নাজের শ্বশুর কাজী আবু বকর, ননদাই (কামালের বোনের স্বামী) হুমায়ুন ফকির, কামালের মামা মোহন মন্ডলসহ আরও কিছু আত্মীয়-স্বজন এসে আমার অসুস্থ মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এর পরপরই লোহাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান বদর খন্দকার আরও ১০/১২ জন লোক নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করে। আমরা এতগুলো লোক দেখে ভয়ে চেচামেচি করলে নার্সরা ছুটে আসে এবং তারা সটকে পড়ে। এরপর অব্যাহত চাপের ভয়ে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসি।
অসুস্থ শামীমা শারমিন নাজ জানান, দেশে যদি সঠিক বিচার থাকে, তবে আমি যৌতুকলোভী, নারী নির্যাতনকারী কামালের বিচার চাই। এর আগে অন্তত ২০ বার পরিবারের লোকেরা শালিস করে মিটানোর চেষ্টা করেছে । আমি ওই সংসারে গেলে আমাকে কামালের মার খেয়ে মরতে হবে অথবা আত্মহত্যা করতে হবে ।
তিনি আরও জানান, ওদের পরিবারের সব ছেলেরা বৌ পিটায়, ইতিপূর্বে তার (কামালের) চাচার অত্যাচারে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন তার স্ত্রী।
মামলার বাদী জুয়েল শেখ জানান, আমার বোনকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোকজন এসেছিল। আমার পরিবারের লোকজন বিষয়টি বুঝতে পারে পালিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
নড়াইল সদর হাসপাতালে কামালের পরিবারের পক্ষে দলবল নিয়ে আসা লোহাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান বদর খন্দকার বলেন, আমি ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে না রে ভাই,আমি গেছিলাম কামালের আত্মীয় হিসেবে। পরিবারে অশান্তি থাকেই, তা নিয়ে মামলা করলে চলে? আমি নাজকে বুঝিয়ে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যেতে হাসপাতালে গিয়েছি, অন্য কোনো উদ্দেশে নয়।
নড়াইল সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আছাদুজ্জামান মুন্সী বলেন, মেয়েটি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার পরেও তাকে পরিবারের লোকদের অনুরোধে ডিসচার্জ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় আমি বাইরে ছিলাম, ফিরে এসে শুনেছি যে, নাজের শ্বশুর-শ্বাশুড়ি তাকে বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে গেছে ।
নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম বলেন, অসুস্থ নাজকে হাসপাতালে দেখভালের জন্য সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আর যদি কেউ হুমকি দিয়ে থাকে বা কেউ বিরক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
প্রসঙ্গত, প্রায় ১৬ বছর পূর্বে নড়াইল শহরের ভওয়াখালী এলাকার মুক্তার হোসেনের মেয়ে শামীমা শারমিন নাজের সাথে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চাচইধানাইড় গ্রামের কাজী আবু বক্করের ছেলে কাজী কামাল হোসেনের বিয়ে হয়। তাদের ১১ বছরের দাম্পত্য জীবনে এক মেয়ে ও ৪ বছরের একটি ছেলে আছে। যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে তাকে শারীরিকভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়। সম্প্রতি শ্বাশুড়ির নামে ১০ শতক জমি বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে কাজী কামাল হোসেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় শনিবার (১ আগস্ট) রাতে কাজী কামাল হোসেন পিটিয়ে স্ত্রী শামীমা শারমিন নাজকে আহত করে। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শনিবার রাত সাড়ে ১১ টায় নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা খুলনার ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে তিনি সময়িকভাবে বরখাস্ত হয়ে ঢাকা রেঞ্জে আছেন।
অভিযুক্ত খুলনার ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) (বর্তমানে বরখাস্ত) কাজী কামাল হোসেন যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানিয়েছিলেন, পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছে মাত্র আর পুরুষদের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়মিত ঘটনা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম








