পিতৃপরিচয় চাওয়ায় মসজিদ কমিটির রোষানলে কুমারী মা
লালমনিরহাট: কুমারী মায়ের সন্তানের পিতৃ পরিচয় দাবি করায় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে পাঁচ পরিবারকে সামাজিকভাবে বর্জন করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে মসজিদ কমিটি।
মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্তে প্রায় ১৫ দিন ধরে কালীগঞ্জের চলবলা ইউনিয়নের পূর্ব দুহুলী গ্রামের হাসমত আলীর ছেলে দুলাল মিয়া ও তার ৪ ভাইয়ের পরিবার সামাজিকভাবে বয়কটের মুখে পড়েছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, পূর্ব দুহুলী গ্রামের দুলাল মিয়ার মেয়ে নামুড়ি মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ইসলাম নাঈম আকলিমার(১৮) সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই উপজেলার কাকিনা চাপারতল এলাকার সবুজ মিয়ার ছেলে কাকিনা উত্তর বাংলা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র নাঈম ইসলাম বিললুর (২৫) সঙ্গে। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভনে আকলিমাকে নিজ কলেজ হোস্টেলে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে বিললু। এতে আকলিমা অন্তঃসত্ত্বা হলে বিয়ের জন্য চাপ দেয় আকলিমা।
কিন্তু বিললু বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আকলিমা বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে তারা সমাজের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়। এ নিয়ে স্থানীয় ভাবে সালিশে বসে বিললুর বাবা ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা দেনমোহরনায় ছেলের বিয়ের দিন ধার্য করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে স্থানীয় কতিপয় দালালের খপ্পরে পড়ে বিললুকে আত্মগোপন করে বিয়ে ভেঙে দেন।
পরে নিরুপায় হয়ে আকলিমা বাদী হয়ে চলতি বছরের ১৯ মার্চ লালমনিরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বিললুকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। এরই মধ্যে ২৩ মে নিজ বাড়িতে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দেন আকলিমা।
কুমারী মায়ের এ সন্তান নিয়ে রীতিমত হৈ চৈ পড়ে যায় পুরো গ্রামে। ওই পরিবারকে দেওয়া হয় নানান অপবাদ। ঈদের সময় স্থানীয় মাস্টার বাড়ি জামে মসজিদ কমিটি ওই পরিবারের দান খয়রাত বর্জন করে তাদের এক ঘরো করে দেয়।
এ অপবাদ থেকে নিষ্কৃতি পেতে আকলিমাকে ওই সন্তান নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন চাচা সামছুল হক, কাজল, হেলাল ও খোকন। কিন্তু আকলিমার বাবা দিনমজুর দুলাল এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাদের বাড়িতে হামলা চালায় তার ভাই সামছুল ও কাজল।
এ নিয়ে পরিবারটি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে দাবি করে দুলাল মিয়া জানান, মেয়েকে বাড়ি ছাড়া না করলে তার ভাইরা যে কোনো সময় আবারও হামলা করতে পারে।
অন্যদিকে, সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের জন্য আদালতের বারান্দায় ধর্ণা দিতে হচ্ছে আকলিমাকে। কিন্তু আসামি পক্ষ টাকার জোরে সব অভিযোগ মাটি চাপা দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত বলে আকলিমার পরিবার জানিয়েছে।
সন্তানের পিতৃ পরিচয় দাবি করে জান্নাতুল নাঈম আকলিমা বলেন, যারা আমাদের এক ঘরো করেছে, তারা আমার সন্তানের পিতৃপরিচয় দিতে পরে না কেন! আমি সন্তানের পিতৃপরিচয় চাই।
আকলিমার মা হালিমা বেগম বলেন, ঈদের পর থেকে মসজিদ কমিটির সভাপতি মোস্তফা আমাদের কোনো দান খয়রাত নেন না কিংবা আমাদের বাড়িতে কাউকে আসতে দেয় না।
এ ব্যাপারে মাস্টার বাড়ি জামে মসজিদের সভাপতি মোস্তফার বাড়িতে গেলে তার সঙ্গে দেখা কিংবা কোনোরূপ যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
চলবলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারমান মিজানুর রহমান মিজু জানান, এক ঘরো করার কোনো খবর তার জানা নেই। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মঞ্জুরল ইসলাম জানান, মামলাটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। ধর্ষক পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। বাদীর পরিবারকে এক ঘরো করার বিষয়টি তার অজানা। তবে বিষয়টি তিনিও খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম








