টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে নোয়াখালীর ৭৯টি গ্রাম
নোয়াখালী: জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশ কিছুদিন থেকে অবিরাম বর্ষণ ও ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ৭৯টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চার লাখ ২০ হাজার মানুষ।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস বলেন, “প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, জেলার কৃষিক্ষেত্রে চার হাজার পাঁচশো হেক্টর বীজতলা, দুই হাজার আটশো হেক্টর রোপা আমন, নয়শো হেক্টর আউশ এবং এক হাজার তিনশো ৬৫ হেক্টর সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।”
তিনি আরো বলেন, “এছাড়া মৎস্যখাতে ১৯ হাজার পাঁচশো খামার ও পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। এক হাজার কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক কয়েকদিনের টানা বর্ষণে এখন পানির নিচে।”
নোয়াখালী সদর, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ি, হাতিয়ায় জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে মনিটরিং কমিটি গঠন ও ত্রাণ সহায়তা শুরু করেছে। হাতিয়া, সোনইমুড়ী, সেনবাগ ও বেগমগঞ্জে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে খিঁচুড়ি পরিবেশন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
শনিবার রাতে জেলা প্রশাসক বদরে মনির ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, “আমাদের ত্রাণ মজুদ রয়েছে পর্যাপ্ত। সর্বাত্মক সামর্থ প্রয়োগে প্রশাসনের আন্তরিক প্রচেষ্টাও রয়েছে।”
বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় কোমেন ও পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট দমকা বাতাস ও ভারি বর্ষণে উপজেলার নিঝুমদ্বীপ, নঙ্গলিয়া, নলেরচর, কেয়ারিংচর নলচিরা, সুখচর, তমরদ্দি, চরঈশ্বর, চরকিং, সোনাদিয়া ও হাতিয়াসহ শতাধিক গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের একটি স্থানে এক কিলোমিটার নলচিরা ইউনিয়নের তিনটি স্থানে প্রায় দুই কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এছাড়া চরঈশ্বর ইউনিয়নের ২১শ’ ফুট বেঁড়িবাঁধও ভেঙে গেছে।
নলচিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বাবলু নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “জোয়ারে নলচিরা ইউনিয়নের তিনটি স্থানের বেঁড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন-যাপন।”
চরঈশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন আল আজাদ নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “চরঈশ্বর ইউনিয়নের তালুকদার গ্রাম এলাকায় ২১ শত ফুট বেঁড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। জোয়ারে এসব এলাকা দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা।”
সোনাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আহছান উল্ল্যাহ বাহার নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “হৈকবাজার এলাকার বেঁড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্রায় শতাধিক মাছের ঘেরসহ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। চৌমুহনী-চরচেঙ্গা ও ওছখালী সদর প্রধান সড়কটিও ভেঙে গেছে।”
তিনি আরো বলেন, “ঘূর্ণিঝড় কোমেন ও পূর্ণিমার প্রভাবে টানা বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা, চরচেঙ্গা, পূর্বমাইজচরা, সোনাদিয়া, হৈকবাদা এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে।”
আহছান উল্ল্যাহ বলেন, “এছাড়া হাতিয়া পৌরসভার চরকৈলাশ গ্রাম, উকিলপাড়া, চরলটিয়া গ্রাম,বেজুগালিয়া গ্রাম, ও ছখালীবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ছোয়াখালী,বাতায়ন,মোক্তারিয়া, নামারবাজার, বন্দরটিলা এলাকা, তমরদ্দি ইউনিয়নের আঠারবেকী, পূর্বক্ষিরোদিয়া, ২ নং ক্ষিরোদিয়া, বেজুগালিয়া, জোড়খালী, কোরালিয়া ও মদনখালী এলাকার লক্ষাধিক মানুসেরই একই পরিণতি।”
তিনি আরো বলেন, “এসব এলাকার শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল ও বেশ কিছু এলাকা নতনু করে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে গেছে। ফলে দেখা দিয়েছে পানযোগ্য পানির অভাব। দেখা দিয়েছে গবাদিপশুসহ গৃহপালিত পশু-পাখির খাবার সঙ্কট।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এটিএস
নিউজবাংলাদেশ.কম








